কি ভাবে অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করবেন?

  • মনস্তত্ত্ববিদ পিয়েরে জনেটের কথায়ঃ

  • ” আমাদের সচেতন মনের জটিল বিশ্লেষণ করার ক্ষমতার যে প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তার অনেক গভীরে থাকে অবচেতন মনের প্রক্ষেপণ।” সহজ ভাষায় বলতে গেলে সচেতন মন যদি আপনার মালী হয় তাহলে অবচেতন মন হলো আপনার বাগান।” সচেতন মন আপনার ইচ্ছাকে বাড়াতে থাকে আর অবচেতন মন সেই ইচ্ছাকে ভিতরে ও বাইরে পূরণ করার চেষ্টা কে বাস্তবায়িত করতে থাকে। যখন আপনার মনে কোনো ইচ্ছা আসছে যা হয়ত নয় কিন্তু কোনোভাবেই আপনি দমাতে পারছেন না, হতে পারে তা আপনার অবচেতন মনের প্রকাশ।

  • ভালো, মন্দ, ঠিক বা ভুল, সব সিদ্ধান্তের জন্যে আমরা সেটাই করি যা আমাদের সচেতন মন থেকে সাড়া দেয়। কিন্তু আমরা আসলে ভুল ভাবি। আমরা যা কিছু করি তার অনেকটা জুড়ে থাকে অবচেতন মন। আমাদের সচেতন মনে আমরা যা চাই সেটা পাওয়ার জন্যে বা করার জন্যে অবচেতন মন আদেশ পালন করতে থাকে। আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে সেই ভাবে চালিত করতে থাকে। অনেক সময় এটা হয়ে থাকে যে আমরা হঠাৎ করে কিছু একটা করি অথচ বুঝে উঠতে পারি না কেনো করলাম; কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলি, “মনে হলো তাই”। এই মনে হওয়াটা আসলে অবচেতন মনের সর্বক্ষণের করতে থাকা আদেশ পালন।
  • অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যেঃ

  • আমাদের মন কখনো একই সময়ে একটা জিনিস নিয়ে ভাবতে পারে না। ঘটনার যোগসূত্র বিচার করতে করতে সে নানা বিষয়ে ভাবতে থাকে। যার জন্যে আমরা কখনো একটা জিনিস নিয়ে ভেবে শেষ করি অন্য কোনো ভিন্ন জিনিস নিয়ে। এই ভাবনার জন্যে যে বিশ্লেষণ, তা করতে গেলে অসংলগ্ন চিন্তাভাবনাকে সরাতে হবে। ‘mental house cleaning’ বা মনের ঘর পরিষ্কার বলে একটা কথা আছে। মন কে পরিষ্কার করতে হবে অহেতুক জিনিসের বিষয়ে না ভেবে। নিজের কোনো কিছু করার জন্যে একটা লক্ষ্য স্থির করুন। পাহারাদারের মত প্রতিদিন একই সময়ে, একই ভাবে সেই লক্ষ্যকে দেখুন, ভাবুন। স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার অবচেতন মন কিছুদিন পর নিজে থেকেই সেই কাজ করা শুরু করবে। প্ল্যান করুন কিভাবে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাবেন। একটা সময় পরে সচেতন মন ঠিক যেমন ভাবে আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে বাধ্য করবে, অবচেতন মন লক্ষ্য হাসিল করার জন্যে সমস্ত সম্ভাব্য বা অসম্ভব পথ আপনাকে দেখাতে আরম্ভ করবে।
  •  অবচেতন মনকে কি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে কাজে লাগাতে পারিঃ

কিসের ছবি দেখতে পাচ্ছেন?

আমাদের মস্তিষ্কেরঃ

হ্যাঁ, এটা হচ্ছে সেই জিনিস, যেটা দিয়ে আমরা প্রতিদিন নিজেকে পরিচালনা করে থাকি। আমরা হাসবো না কাঁদব, না কিছু চিন্তা করবো, সবকিছু এইটার সাহায্যেই করতে হয় এবং এটার দ্বারাই সম্পাদিত হয়।

মনে করতে পারেন, আমাদের দেহটা হচ্ছে একটা রাজ্য আর ব্রেনটা হচ্ছে সেটার রাজাঃ

আচ্ছা, কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনি আপনার মস্তিষ্ক কতটুকু কন্ট্রোল করতে পারেন? মানুষ কি আসলেও তার মস্তিষ্কের পুরোটা ব্যাবহার করতে পারে? না, পারে না।

কিন্তু কেনো পারে না? কারণ হচ্ছে এই, অবচেতন মন. এর খুব সুপরিচিত ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে সাবকানসাস মাইন্ড আমরা এই অবচেতন মন এর কারণে আমাদের মস্তিষ্ক কে পুরোপুরি কন্ট্রোল করতে পারি না। যেই অংশটুকু করতে পারি না, সেই অংশটুকু ওই অবচেতন মন করে।

তাহলে আমরা যদি অবচেতন মনকেই কন্ট্রোল করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমরা মস্তিষ্কের ওই বাকি অংশটুকুও কন্ট্রোল করতে পারবো। তখন কিন্তু পুরা মস্তিষ্ক আমাদের দখলে! জোস হবে না?

এখন, এই জোস কাজটা করার জন্য তো আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। কষ্ট নে করলে তো কেষ্ট মিলে না! এর সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে মেডিটেশন করা।

কিভাবে এই মেডিটেশন করা যায়?

  • পা ভেঙে কোথাও সমতল স্থানে বসুন
  • ডান হাত ডান পায়ের উপর, বাম হাত বাঁ পায়ের উপর রাখুন
  • শরীরের সব শক্তি ছেড়ে দিন। শক্ত করে রাখবেন না।
  • তবে নিজের শরীরটাকে, পুরো সোজা রাখবেন। যেনো মাথা থেকে পেট পর্যন্ত ভূমির উপর লম্ব ভাবে অবস্থান করে।
  • এবার চোখ বন্ধ করুন।
  • নিজের শ্বাস প্রশ্বাস এর উপর মনোযোগ দিন।
  • পূর্ণ মনোযোগ দিন। অন্য সবকিছু আস্তে আস্তে ভুলে যান।
  • এভাবে দুই তিন মিনিট ধরে কিভাবে শ্বাস নিচ্ছেন ও বের করছেন , সেটার উপর পূর্ণ মনোযোগ দিন। আর আস্তে আস্তে দুনিয়ার সকল চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন।
  • এবার একটু বড় বড় শ্বাস নেওয়া শুরু করুন।
  • শ্বাস টা নিবেন বেশ বড় এবং তা যেন আপনার পেট পর্যন্ত পৌঁছে।
  • পেট ফুলিয়ে ফুলিয়ে শ্বাস নিতে থাকুন। বড় বড় শ্বাস।
  • এইভাবে ২-৩ মিনিট করলে, আপনি ক্ষমতা ফিরে পাবেন আপনার অবচেতন মনকে কন্ট্রোল করার।

 

 

 

Leave a Reply