কেউ কি বলতে পারবেন- সফল পেশাজীবীর সমীকরণ কী?

গাধা + মেধা = সফল পেশাজীবী
উপরের সমীকরণে মানুষকে গাধার সঙ্গে তুলনা করায় যাঁরা কষ্ট অনুভব করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি- আমি আসলে বোঝাতে চাইছি যে, গাধার খাটুনির সঙ্গে মেধার প্রয়োগ ঘটালেই পেশাগত জীবনে সর্বোচ্চ সফলতা ও উন্নতি লাভ করা সম্ভব।
একটা কথা সবাইকে বিশেষভাবে স্মরণে রাখতে হবে যে, সমগ্র পৃথিবীজুড়ে কায়িক পরিশ্রমের চাইতে মেধার মূল্য (বাজার দর) সব সময়ই বেশি ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাছাড়া মহান আল্লাহ্ মানুষকে কষ্টসহিষ্ণু ও পরিশ্রম-নির্ভর করে তৈরি [সূত্র : পবিত্র কোরআন-এর ৯০নং সুরা বালাদ-এর ৪নং আয়াত] করলেও এটাই বাস্তবতা যে, কারো পক্ষেই অসীম কায়িক পরিশ্রম করা সম্ভব নয়। অবশ্যই কায়িক পরিশ্রমের সর্বোচ্চ পরিসীমা আছে। কিন্তু আমরা যেটা করতে পারি, তাহলো মেধাকে প্রতিনিয়ত শাণিত করতে। কেননা মেধাকে সমৃদ্ধ করার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। যত জ্ঞানচর্চা করবেন, তত ঋদ্ধ হবেন। এজন্যই বলি- নিয়মিত বই পড়ুন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।
মানুষ যখন কায়িক পরিশ্রম বাড়িয়ে দেয়, তখন তার আয়-রোজগার যৌগিক হারে বাড়তে থাকে। মানে অধিক পরিশ্রম করলে আপনার আয় ৩/- থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ ৩+২ = ৫/- হতে পারে। কিন্তু আপনি যখন মেধাকে খাটাবেন, তখন আয়-রোজগার গুণীতক হারে বাড়বে। মানে অধিক বুদ্ধি খাটালে আপনার আয় ৩/- থেকে বেড়ে ৩ X ২ = ৬/- হবে। কিন্তু আপনি প্রতিনিয়ত জ্ঞান চর্চা করে মেধাকে যখন আরো শাণিত করবেন, তখন আপনার আয়-রোজগার জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকবে। মানে নিত্য-নতুন জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে মেধাকে শাণিত, পরিশীলিত ও ঋদ্ধ করলে এবং দৈনন্দিন কাজ-কর্মে তার প্রতিফলন ঘটালে আপনার আয় ৩/- থেকে বর্গাকারে বেড়ে (৩)২ = ৯/- হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ্। মোদ্দাকথা- Earning বাড়াতে চাইলে তার আগে “L” বসাতে হবে। মানে Learning না বাড়লে আপনার Earning বাড়বে না!
একজন পেশাজীবী হিসেবে আপনি যদি এখন ৩/- আয় করেন, শেখার জন্য এর মাত্র ১০% অর্থাৎ ০.৩০/- বিনিয়োগ করুন। এই যৎসামান্য অর্থ আপনি বিনিয়োগ করবেন ভালো কিছু বই কিনে পড়া ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য। প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে জেগে দিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করার আগেই অন্তত ১০ পৃষ্ঠা বই পড়বেন আর প্রতি ১০০ দিনে অন্তত একটি দিন শেখার জন্য বরাদ্দ করবেন। মাত্র ছয় মাস থেকে এক বছর এই নিয়ম মেনে চললেই আপনি নিজের ভেতরে অসামান্য পরিবর্তন লক্ষ্য করে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যাবেন। দ্বিতীয় বছরে আপনি সম্পূর্ণ নতুন এবং উন্নত মানুষে পরিণত হবেন এবং তৃতীয় বছরের (১০০০ দিনের) মধ্যেই আপনার অবস্থান পুরোপুরি বদলে যাবে। আপনার আয়-রোজগার আগের তুলনায় নিদেনপক্ষে দেড়গুণ থেকে সর্বোচ্চ আড়াই গুণ বেড়ে যাবে।
এজন্যই বলি- শেখার পেছনে বিনিয়োগ করতে কখনো কার্পণ্য করবেন না। যাঁরা একেবারেই সীমিত আয়ের মানুষ, যৎসামান্য আয়-রোজগার দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন, তাঁরাও চাইলে সপ্তাহে দুইদিন (সোম ও বৃহস্পতিবার) রোজা রাখতে পারেন। এর ফলে একদিকে সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত হবে, অন্যদিকে খাদ্যগ্রহণ বাবদ যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তা শেখার জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন। মহান সৃষ্টিকর্তা জীবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর কাছে যে বাণী পাঠানো শুরু করেছিলেন, তার প্রথম শব্দটিও ছিল ‘পড়ো’ (ইকরা)।
কিন্তু এসবের কিছুই ঘটবে না এবং আপনি আগের অবস্থানেই রয়ে যাবেন (এমনকি অবস্থান থেকে ছিটকেও পড়তে পারেন)- যদি উপরোক্ত পরামর্শ অনুযায়ী নিজের উৎকর্ষতা সাধনের উদ্যোগ না নেন। সেজন্যই বলি : পড়তে আপনাকে হবেই- হয় বই, নয়তো পিছিয়ে! কোনটা করবেন- সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার।

Leave a Reply