ফেসবুক সম্পর্কে কিছু এক্সক্লুসিভ তথ্য

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল নিয়ে আমার আজকের টিউন। সামাজিক যোগাযোগের সর্বশ্রেষ্ঠ প্লাটফর্ম ফেসবুক বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ৪ ফেব্রুয়ারী ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও মুলত ২০০৬ সালের পর থেকে ফেসবুক এক বিশাল কমিউনিটির রূপ নেয়।

ফেসবুককে আমার কাছে ছোটবেলায় খেলা নোকিয়া ফোনের স্ন্যাক গেইমটার মতো মনে হয়। কারন এটি একের পর এক মানুষদের সংযুক্ত করছে আর আকারে বড় হচ্ছে। বর্তমান সময়ে এটা এমন এক অবস্থায় দাড়িয়েছে যে, কারও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট না থাকলে তাকে এলিয়েনদের কাতারে ফেলা হয়। কারন হিসাবে একটি উদাহরণ দিচ্ছি, কিছুদিন আগে ফেসবুকে দেখলাম এক ভাইয়া তার নবজাতকের জন্য একটি আইডি খুলে ফেলেছে। তার সন্তান যখন বড় হবে তখন নাকি সে এই আইডি ব্যবহার করবে। এই বিষয়টা থেকে আপনারা হয়তো বুঝে গেছেন যে ফেসবুক আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা ঘটনার সাথে কীভাবে জড়িয়ে গেছে। তবে প্রচার প্রসার এবং ব্যবহারে এগিয়ে থাকার কারনে স্বভাবতই কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি হয়, সেটা হলো এটা আমাদের জীবনের জন্য কতোটা উপকারী? সাম্প্রতিক গবেষণায় যে উত্তরগুলো বের হয়ে আসছে আজ সেগুলো নিয়েই আমার সব আয়োজন।

ফেসবুক উচ্চমাত্রার আসক্তি সৃষ্টিকারী সামাজিক সাইট

এই টিউনটি যারা পড়ছেন তাদের মাঝেও অনেকেই ফেসবুকের চরম মাত্রায় আসক্ত রয়েছেন। আর যে কোন কিছুর প্রতি অতিরিক্ত মাত্রায় আসক্তি থাকাটা একটি সামাজিক ব্যাধি হিসাবে ধরা হয়। এবং এই আসক্তির মাত্রা খুব বেশি হলে যেকোন ধরনের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। আপনি ফেসবুকের প্রতি আসক্ত কিনা সেটা প্রমাণ করার জন্য কয়েকটি প্যারামিটার রয়েছে। আপনি নিজে মিলিয়ে নিন আপনার সাথে কোনগুলো মিলে যায়। তবে সেগুলো আপনার সাথে মিলে যাবে সেগুলো টিউমেন্ট সেকশনে জানাতে ভুলবেন না যেন।

ফেসবুক আসক্তির প্যারামিটার-

  • ফেসবুকে ছাড়া আপনি এক মূহুর্ত চলতে পারেন না। যেকোন ঘটনা ফেসবুকে শেয়ার করতে মন চায়।
  • দিনে একাধিকবার ছবি কিংবা স্ট্যাটাস আপডেট করেন।
  • কোন স্ট্যাটাস আপডেট করার পর মিনিটে মিনিটে নোটিফিকেশন চেক করা।
  • স্ট্যাটাসে লাইক কিংবা টিউমেন্টের জন্য মরিয়া হয়ে থাকেন। অটোলাইক অটো টিউমেন্টের পেছনে সময় শ্রম ব্যয় করেন।
  • আপনার এক বা একাধিকবার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে এবং এসময় আপনি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। যদিও এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কারন যারা ফেসবুক নিয়ে বেশি টেনশন করে তাদের অ্যাকাউন্ট বেশি পরিমাণে হ্যাক হয়।
  • উপরের প্যারামিটারগুলো দেখার পরে যদি আপনার মেজাজ খারাপ হয় তাহলেও আপনি ফেসবুকের প্রতি চরম মাত্রায় আসক্ত। কারন সত্য কথা সব সময় নাকি তিতা লাগে।
  • এই লক্ষণগুলো যদি আপনার মাঝে থেকে থাকে তাহলে আপনি খুব শীঘ্রই মানুষিক এবং সামাজিক বিপর্যয়ের মাঝে পড়ে যাবেন। সুতরাং ফেসবুক থেকে সাময়িক দুরত্ব বজায় রেখে আসক্তি কমানোই শ্রেয়।

ফেসবুক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আপনার চিন্তাশক্তি নিয়ন্ত্রন করে

সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৭ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর উপর গবেষণায় দেখা গেছে যদি তাদের টাইমলাইনে ইতিবাচক কোন বিষয় থাকে তাহলে তাদের চিন্তাভাবনাও ইতিবাচক হয়। অন্যদিকে নেতিবাচক বিষয়গুলোও তাদের চিন্তাভাবনাগুলো নেতিবাচক করে দেয়। তবে গবেষণার ফলাফল যায় আসুক সেটা কিন্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। আসল কথা হলো ফেসবুক চাইলেই আমাদের চিন্তাশক্তি তাদের নিজেদের মতো করে তৈরী করতে পারছে। আমরা বিভিন্ন পেইজ, অন্যদের টাইমলাইন ইত্যাদি দ্বারা ডাইভার্ট হয়ে যাচ্ছি। আমাদের চিন্তার জগত ফেসবুকের সাথে মিলে যাচ্ছে। ফেসবুকের যেকোন বিষয়কে আমরা আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে ফেলছি। ফলে অনেক মিথ্যা সংবাদ এবং তথ্য নিয়ে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। এবং সেই আমাদের চিন্তার জগতকে পরিবর্তন করে ফেলছি। ইন্টারনেট ডট অর্গের বিরুদ্ধে প্রচারণাগুলোও কিন্তু একই কারনে হয়েছে। কারন এক্ষেত্রে আমরা কোন কোন কন্টেন্ট দেখবো সেটা আগে থেকেই নির্ধারণ করা। অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার আমাদের নিজেদের রিমোট কন্ট্রোলিং সিস্টেম তৈরী করে। কারন চিন্তার স্বাধীনতা না থাকলে ব্যক্তির স্বাধীনতা মূল্যহীন।

ফেসবুক হলো নতুন খেলার মাঠ

ফেসবুক বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে এমন এক জায়গায় দাড় করিয়েছে যে, ফেসবুকের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আমরা বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে শুরু করেছি। আগে বিকাল হলে আমরা দলবেধে খেলতে যেতাম। ঘুরাঘুরি আড্ডা সব কিছুই হতো। কোন বন্ধুর কাছে প্রয়োজন হলে তার বাসায় গিয়ে একবার ঘুরে আশাকরি। যেমন, বিকাল বেলা শুয়ে শুয়ে আপনি হয়তো গেইম খেলছেন। এমন সময় আম্মু এসে বললো যে, এখনো শুয়ে শুয়ে কী করছো? যাও বায়রে গিয়ে খেলো। আপনি বাধ্য ছেলের মতো মোবাইল বা ল্যাপটপটা বায়রে এনে গেইম খেলা শুরু করলেন! কিন্তু ভেবে বলেন তো আম্মু কি আসলে এটাই করতে বলছিলো? অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, ফেসবুকে গেইম খেললে সমস্যা কী? পরিমিত মাত্রায় গেইম খেললে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু অনলাইনে গেইম খেললে প্রতিযোগিটা একটু অন্য রকম থাকে। সব সময় নতুন স্কোর করার চিন্তা আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। ফলে ক্লাসরুম, রিডিংরুম এমনকি মসজিদ মন্দিরে ইবাদত করতে গিয়েও পোলাপাইনদের গেইম খেলতে দেখা যায়।

ফেসবুক মনে করিয়ে দেয় আমাদের কি নেই!

ফেসবুকে অনেক সময় দেখা যায়, আপনি কি সিঙ্গেল? তাহলে আপনার নিউজ ফীডে দারুন সব রিলেশনশীপ তথ্য জানতে পারবেন অমুক পেইজ থেকে। আসলে ফেসবুক সবার জন্য এক উন্মুক্ত জায়গা। এখানে প্রত্যেকটি স্টেইজের মানুষের সমাগম রয়েছে। আপনি নিউজ ফীডে দেখলেন চমৎকার সব হ্যাপি কাপলদের ছবি অথবা তাদের বিষয়ে মজার সব তথ্য। অথবা দেখে ফেললেন প্রেম করার উপকারীতা বিষয়ে কিছু ট্পিস। আপনার মনের ভেতরে তখন সহজাত প্রবৃতির কারনে আপনা আপনি একটা হাহাকার কাজ করবে। আপনি হয়তো খেয়াল করে দেখেন অনেকেই ফেসবুকে হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস আপডেট করে। এগুলো শুধুমাত্র আমাদের আবেগের বেহুদা প্রকাশ। এগুলো দ্বারা সামাজিক ভাবে কোন উপকার না হলেও মানুষিক দিক থেকে ঠিকই আমরা আমাদের অভাবটুকু বুঝতে পারি।

ফেসবুকই অনেকের কাছে ইন্টারনেট

আজকাল ইন্টারনেট বলতে অনেকেই ফেসবুকের বায়রে চিন্তা করতে পারেনা। বন্ধু বান্ধব অনেকেই গল্প করে বলে, আমি সারাদিন ইন্টারনেটে থাকি। আসলে দেখবেন তারা সারাদিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে। ফেসবুকে অতি মাত্রায় আসক্তির কারনে ইন্টারনেট এর সঠিক ব্যবহার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। ফেসবুকের অন্য একটি ব্যাপার হলো ফেসবুকে অ্যানোনিমাস ব্রাউজিং সাপোর্ট করেনা। ফলে আমরা যে কারো ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করার সুযোগ পাচ্ছি। ফলে ইন্টারনেটে সামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি অসামাজিক কাজেও জড়িয়ে পড়ছি।

ফেসবুক আমাদের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে

ফেসবুক বিষয়ে সবচেয়ে বড় কথা হলো ফেসবুক আপনার মোড কে পরিবর্তন করতে পারেনা। শুধু সেটার তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি যদি কখনো মন খারাপ নিয়ে ফেসবুকে বসেন তাহলে দেখবেন বিভিন্ন জনের মন খারাপ করা স্ট্যাটাসগুলো আপনার মন আরও খারাপ করে দিচ্ছে। তাছাড়া আমাদের অনেকের মাঝে মানুষিকতার সাদৃশ্য থাকার কারনে কখনো কারও মন খারাপ স্ট্যাটাস আমাদের মনকে আরও খারাপ করে দিচ্ছে। ফেসবুকে বানানো কোন ঘটনা যদি আপনার জীবনের সাথে আংশিক মিলে যায় তাহলে সেই ঘটনার শেষটুকুর সাথে নিজেকে মিলাতে শুরু করেন। আজকাল মানুষের মাঝে হতাশা, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং কর্মের দৃঢ়তার যে ঘাটতি দেখা যায় তার মূল কিন্তু অনেকাংশ ফেসবুক। আপনি ফেসবুকে লগিন থাকা অবস্থায় কোন কাজ করলে দেখবেন সময় এবং শ্রম প্রায় ৩গুন বেশি লাগে। আর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো লগআউট অপশনে ক্লিক করা।

আজকের এই টিউনটার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু আপনাদের ফেসবুক ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা না। বরং ফেসবুক ব্যবহারে আরও একটু সতর্ক করা। জীবনের প্রয়োজনে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। কিন্তু সেই প্রযুক্তির কারনে আমাদের জীবন যাত্রা বাধাগ্রস্থ হলে সেটা সত্যিই হতাশার। আশা করবো সামনের দিনগুলোতে আপনারা ফেসবুকের স্বল্প ব্যবহার করবেন। কারন, প্রত্যেক জিনিসই ততোক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকে যতোক্ষণ পর্যন্ত না সেটার অতিরিক্ত ব্যবহার না করা হয়। তবে শেষ করার আগে একটা মজার জিনিস বলি, আপনারা গুগলে Facebook Addiction লিখে ইমেজ সার্চ করে একবার দেখতে পারেন। এত্তো মজার সব ছবি আসে যে, সেগুলো দেখে হাসতে হাসতে আমি অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। আপনাদের জন্য সেখান থেকে কয়েকটি তুলে দিলাম। এতোগুলো তিক্ত কথার মাঝে কিছুটা আনন্দ দেওয়ার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র। কেমন লাগলো সেটা অবশ্যই জানাবেন।

  • যখন আমরা পড়তে বসি তখন ফেসবুক যে ভুমিকা পালন করে!

  • গোপন কিংবা প্রকাশ্য যেকোন কিছু যারা ফেসবুকে শেয়ার করে থাকতে পারে না।

  • জীবনের সব আনন্দময় মূহুর্ত যাদের ফেইসবুক ঘিরে আবর্তিত হয়!

  • ঘটনার গুরুত্বের চাইতে যখন ফেইসবুকে শেয়ার করাটা বেশি প্রাধান্য পায়!

  • ফেইসবুক আসক্তরা যদি কোনদিন ফেইসবুক ছেড়ে বাস্তব জগতে চলে আসে.

  • আমরা প্রতিদিন কিছু ফেইসবুক পাগল দ্বারা যে ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হই।

  • বাংলা ডায়লগগুলো ঘটনা অনুসারে সংযোজন করলাম।

Leave a Reply