আদর্শ শিক্ষকের ১২ টি গুনাবলীঃ

আজকে আলোচনা করব একজন আদর্শ শিক্ষকের গুনাবলী থাকেঃ

 আপনি যদি একজন শিক্ষক হয়ে থাকেন এবং শিক্ষকতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন ( আপনার যদি এক জন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থাকে )  তবে আপনাকে অবশ্যই কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কিছু অভ্যাস আয়ত্ত করার পাশাপাশি তা অনুশীলন করতে হবে নিয়মিত।

১.  শিক্ষকতা পেশাকে উপভোগ করাঃ

আপনি তখনি পড়ানো কে উপভোগ করতে পারবেন যদি আপনি মন থেকে ক্লাসের বাচ্চাদের ভাল বাসেন, তাদের উন্নতির কথা ভাবেন। আপনি নিজে পড়ানো মজার না বানাতে পারলে এটা প্রত্যাশা করতে পারেন না যে আপনার ক্লাসে বাচ্চারা তা মজা নিয়া শিখবে। আপনি যদি ক্লাসের প্রতিটা মুহূর্ত আনন্দদায়ক ও ইন্টারেক্টিভ করতে পারেন তবেই শিক্ষকতা এবং শেখা উপভোগ্য দুটোই উপভোগ্য হবে। মনে রাখবেন বিভিন্ন প্রতিষ্টনে পড়ায় তারা সবাই শিক্ষক কিন্ত  তারা ( আদর্শ শিক্ষক না, ১/২% আদর্শ শিক্ষক হয় ) আপনি কি আদর্শ শিক্ষক হতে চান?

২.  অন্য শিক্ষক থেকে নিজের পার্থক্য তৈরী করাঃ

শিক্ষকতা মানে শুধু পড়ানো না, একটা অনেক বড় দায়িত্ব। শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় কাজ হল ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসা এবং একটা পার্থক্য তৈরী করা। ছাত্র-ছাত্রীরা যেন আপনার ক্লাসে নিরাপদ, বিশেষ এবং নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এই অনুভূতিটা আপনার ক্লাসে তৈরি করাটা খুব জরুরী যাতে আপনার একটা ইতিবাচক প্রভাব তাদের মধ্যে থাকে কারন আপনি জানেন না ক্লাসে ঢোকার পূর্বে কিংবা ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পর তারা কি ধরনের বাস্তবতা বা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সময় পার করে। সুতরাং তারা যদি পরিবার থেকে যথাযথ সাপোর্ট নাও পায় তবুও অন্ততপক্ষে আপনি তাদের জীবনে একটা পার্থক্য তৈরি করতে পারবেন। সকল কমল মতি শিক্ষার্থীদের মাঝে আপনি আলাদা তা প্রমান করতে হবে।

 ৩.  ইতিবাচক মানষিকতা ছড়িয়ে দিনঃ

ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ক্লাসে ঢুকুন প্রতিদিন। আপনার সুন্দর হাসিটি ধরে রাখুন সারাদিন এবং ছড়িয়ে দিন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে। ক্লাসে ঢোকার পূর্বে আপনার সমস্ত সমস্যা, ব্যক্তিগত প্রতিকূলতা-কষ্ট দরজার ওপাশে রেখে আপনার সর্বোচ্চটুকু নিয়ে হাজির হন ক্লাসে, বজায় রাখুন এই মুখোশটি এবং আপনার ছাত্র-ছাত্রীদের ভাবতে দিন আপনাকে একজন সুপার হিরো হিসেবে। সবসময় ইতিবাচক এবং পজেটিভ এনার্জি নিয়ে ক্লাসে থাকলে তা যেমন ছড়িয়ে পড়ে তেমনি নেতিবাচকটাও ছড়িয়ে পড়ে উল্টোভাবে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন আপনি কী করবেন।

৪.   আপনার ছাত্র-ছাত্রীদের চিনতে শিখনঃ

একজন সফল ও আদর্শ শিক্ষকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্ধে খুব ভাল করে জানেন এবং তাদের আগ্রহ, সবলতা-দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত, এবং এই তথ্যগুলোর ভিত্তিতে তাদের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেন। ক্লাসরুমের বাইরে আলাপচারিতায় শিক্ষার্থীকে সহজেই চেনা যায় বিভিন্নভাবে। আপনি আপনার ছাত্র-ছাত্রীদের যত ভালভাবে জানবেন, পড়ানোটা তত সহজ হবে।

 ৫.  নিজের আদর্শ,শিক্ষা ,সর্বোচ্চটুকু উজার করে দিনঃ

শিক্ষক হিসেবে আপনি যখন নিজের সর্বোচ্চটুকু দিতে পারবেন তখনি আপনি আপনার ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে তাদের সর্বোচ্চটা প্রচেষ্টা প্রত্যাশা করতে পারবেন। তাই নিজের সর্বোচ্চটুকু উজার করে দিন।

৬.  মুক্তমনা হোনঃ

মুক্তমনা হওয়া এবং গঠনমূলক সমালোচনাকে পজিটিভভাবে নেওয়া একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কারন আপনি প্রতিনিয়ত আপনার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক, সহকর্মী এবং প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে সমালোচিত হন। কেউ-ই নিখুঁত নয়। সুতরাং সমালোচনাগুলো নিজের উন্নতির জন্য টিপস হিসেবে ব্যবহার করুন।

৭.  একটি আদর্শ মানদণ্ড নির্ধারণ করুনঃ

শিক্ষক হিসেবে কাজের একটি আদর্শ মানদণ্ড নির্ধারণ করুন এবং তা শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করুন যাতে তারা বুঝতে পারে আপনি তাদের কাছে কিরকম কাজ ও ফলাফল প্রতাশা করেন, এবং তারা তা পূরনে নিজেদের যথাসাধ্য চেষ্টা করে।

৮.   গোছালো হন ও মার্জিত আদর্শ শিক্ষকের পোষাক পরুনঃ

কথায় আছে আগে দর্শনধারী  পরে তার গুণ বিচারি । পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন ,মার্জিত আদর্শ পোষাক পরুন।  কাজগুলো প্লান করে, গুছিয়ে করুন, ক্লাসের লেসন প্লান তৈরি করুন। আপনি যদি গুছিয়ে এবং প্লান অনুযায়ী ক্লাস নেন তাহলে নিজেকে এবং শিক্ষার্থীদের অবস্থান বুজতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী করণীয় ঠিক করতে পারবেন।

 ৯.  নিজেকে প্রস্তুত করুনঃ

পড়ানোর জন্য আপনাকে কোনকিছু শূন্য থেকে শুরু করতে হবে না। একজন দক্ষ ও ক্রিয়েটিভ শিক্ষক সবকিছু এবং সব আইডিয়া নিজে সৃষ্টি করেনা বরং বিভিন্ন জায়গা থেকে রিসোর্স সংগ্রহ করেন। তাই নিজেকে আপডেটেড ও সমৃদ্ধ করতে নিয়মিত বই, ইউটিউব, পিন্টারেস্ট, ফেসবুক, ব্লগ ইত্যাদি ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় রিসোর্স সংগ্রহ করুন ও প্রস্তুতি নিন সবাইর থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলুন নিজেকে এমন ভাবে তৈরী করুন যেনো আপনার ক্লাস করার জন্য সকল শিক্ষার্থীরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে ।

১০.  পরিবর্তনকে গ্রহন করুনঃ

জীবনে সবকিছু পরিকল্পনা করে হয়না, পরিস্থিতির কারনে এবং প্রয়োজনে আমাদের কাজে পরিবর্তন আনতে হয়। আপনি যদি পরিবর্তনকে গ্রহন করেন এবং নতুন নতুন বিষয় ও কৌশল আয়ত্ত করেন তবেই আপনার দক্ষতা সময়ের সাথে বাড়বে।

১১.  সবাইকে অনুপ্রাণিত করুন, সময় ও ছাত্র জীবনের গুরুত্ব বুঝানঃ

আপনি যাদেরকে পড়াচ্ছেন তাদের মন কমলমতি যা শিখাইবেন তারা তাই শিখবে এ সমাজে নিরুৎসাহিত করার লোকের কোনো অভাব নেই শুধু অনুপ্রাণিত করার লোক নেই  আপনি সব সময় সবাইকে অনুপ্রাণিত  করুন। তোমরাই পারবে গড়তে সুন্দর ভবিষ্যৎ  যদি সময় ও ছাত্র জীবনের প্রতিটি মুহুত্বকে কাজে লাগাতে পারো। 

আপনি আদর্শ শিক্ষক হতে পারলে আপনার ভূমিকা হবে পরশ পাথরের মত আপনার আদর্শের অণুভুতিতে সকল শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠবে আদর্শ শিক্ষার্থী তারাই গড়ে আগামীর আদর্শ বাংলাদেশ।

১২. নিজেকে সময় দিন এবং চিন্তার প্রতিফলন করুনঃ

একজন দক্ষ শিক্ষক নিজের ক্লাসে যা ঘটে তা প্রতিনিয়ত চিন্তা করে এবং প্রতিফলনের মাধ্যমে বুঝতে পারে কিভাবে আরো ভাল করা যায়, ব্যর্থ্যতা থেকে বেরিয়ে আসা যায়। তাই দক্ষতা বাড়াতে নিজেকে সময় দিন প্রতিনিয়ত, ভাবুন কী ভাল ছিল, কী পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলেই আপনি দক্ষ ও আদর্শ  শিক্ষক হয়ে উঠবেন।

এই ১২ টি টিপস মনে রাখুন, চর্চা করুন নিয়মিত দেখবেন আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ শিক্ষক হিসাবে প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রতিষ্টিত করুন।   উপভোগ করুন শিক্ষকতার মত মহান পেশাকে ।

 

Leave a Reply