আপনি কিভাবে মানুষের মন জয় করবেন?

নিউ-ইয়র্কের তেত্রিশতম রাস্তার পোস্টঅফিসে একটা চিঠি রেজিস্ট্রি করাবার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম-_খামগুলোকে ওজন করা, বেছে বেছে স্ট্যাম্প দেওয়া, খাম, পোস্টকার্ড, স্ট্যাম্প ইত্যাদির দাম কেটে নিয়ে বাকী পয়সা ফেরৎ দেওয়া-_ ইত্যাদি একই ধরনের কাজ বছরের পর বছর করতে করতে কাউন্টারে বসা কেরানীটি অত্যন্ত বিমর্ষ ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। দুঃসহ একঘেয়েমি যেন তাকে ভীষণ হতাশাগ্রস্ত ক’রে তুলেছে।

সুতরাং আমি নিজেকে বললাম। “এ কেরাণীটির মন যাতে জয় করে নিতে পারি সেজন্য আমাকে চেষ্টা করতে হবে। আমার ইচ্ছে হল-এ হতাশাগ্রস্ত ক্লান্ত বিমর্ষ মানুষটাকে একটু শাস্তি দেওয়ার জন্য আমাকে সুন্দর কিছু কথা বলতে হবে। সুতরাং আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম-তার মধ্যে প্রশংসা করার মত কোনো বিষয় আছে কি? থাকলে সেটা আমাকে খুঁজে বার করতে হবে।

সবক্ষেত্রে এ প্রশ্নটার উত্তর দেওয়া সহজ হযে ওঠেনা- বিশেষতঃ

অপিবিচিত লোকদের ক্ষেত্রে কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটা আমার কাছে খুব কঠিন মনে হল না সুতরাং, তিনি যখন কয়েকটা খাম ওজন করছিলেন, আমি ভদ্রলোকেব দিকে তাকিযে খুব উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠলাম, মশাই, আপনার চুলগুলা দূর “থকে আমার নজর কেড়ে নিয়েছে ওগুলো এত সুন্দর, সত্যি আমার দেখে খুব ঈর্ষা হচ্ছে। যদি মাপনার মত ওরকম চুপ আমার মাথায় থাকত!

আমার কথা শুনে, ভদ্রলোক একটু চমকে উঠে আমার দিকে তাকালেন লক্ষা করলাম তার মুখটা খুশীর আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মুখে ফুটে উঠেছে মুদু হাসি। তিনি একটু লজ্জা জড়িত বিনয়ের সঙ্গে বললেন, “ধন্যবাদ।  অনেকে অবশ্য আমাব চুল সম্পর্কে এধরনের কথা ব’লে থাকেন- কিস্তু যতটা ভাল থাকা উচিত ছিল–ততটা ভালো এখন আর নেই।”

আমি তাকে নিশ্চিত করলাম যে, যদিও ভার চুলের উজ্জ্বলতা বা চাকচিক্য একটু কমে গেছে, তা সন্ত্বেও এখনও যা আছে–তা এত সুন্দর যে অন্যের ঈর্ষা জাগাবার পক্ষে যথেষ্ট। আমার প্রশংসার কথা শুনে তিনি ভীষণ খুশী হলেন। তারপর আমাদের মধ্যে সাধারণ দু-একটা কথাবার্তা হয়েছিল।

আমি বাজি ফেলে বলতে পারি, সেদিন ভদ্রলোক খুশীর হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে লাঞ্চ করতে গেছিলেন। আমি বাজি ধ’রে বলতে পারি তিনি রাত্রে বাড়ীতে ফিরে এবথা তিনি তার স্ত্রীকে বলবেন, আর একথাও আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি তিনি আয়নার স্বামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলবেন, “সত্যিই! আমার মাথার চুলগুলো খুব সুন্দর।”

আমি এই ঘটনাটা বেশ কয়েকজনকে বলেছিলাম। তাদের মধ্য থেকে পরে আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছিল, “এসব করে আপনার কি লাভ হয়? আপনি তার কাছ থেকে কি পেলেন  প্রকৃত পক্ষে আমরা যদি এমন ঘৃন্য স্বার্থপর হয়ে উঠি যে, অপরের কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু পাবার প্রত্যাশা করে আমরা তাকে সামান্য স্বত্তি-শান্তি আনন্দ না দিতে পারি বা তার মধ্য সামান্যতম উৎসাহ সঞ্চার করতে না পারি, আমাদের হৃদয় যদি আপেলের থেকে বড় না হয় তাহলে আমাদের উপযুক্ত এবং যোগ্য, ব্যর্থতার গ্লানি আমরা বহন করতে বাধ্য হব।

এমন অনুপ্রেরণা মূলক লেখা পড়তে চাইলে আপনার টাইম লাইনে শেয়ার করে কমেন্ট করেন।

Leave a Reply