এতোদিন যেগুলোকে MEDICINE বলে জেনে এসেছেন, সেগুলো আসলে ঔষধ নয়, ড্রাগস (মাদক) !!!

MEDICINE বা ওষুধ বলে ফার্মেসিগুলোতে যা কিছু বিক্রি হচ্ছে, ডাক্তার সাহেবগণ যা কিছু প্রেস্ক্রিপশনে লিখে দিচ্ছেন আর আমরা সরল বিশ্বাসে অনেক টাকা ব্যয় করে প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী যা কিছু কিনে খাচ্ছি, এগুলোর একটাও ওষুধ নয়, সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত সিনথেটিক ড্রাগস! জেনে আরো অবাক হবেন যে, Synthetic Drugs-এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো রোগ-এর বিরুদ্ধে কাজ না করে ওই রোগের কারণে মানবদেহে তাৎক্ষণিকভাবে যে ব্যথা/বেদনা হয়, সেই অনুভূতিকে সাময়িক অকার্যকর করে রাখা।
মেডিসিন ও ড্রাগের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। এ শব্দ দু’টির অর্থগত পার্থক্য প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাস্থ্য-সেবার সার্বিক চেহরাই বদলে যেত। গণমাধ্যমগুলো এ ব্যপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। কেননা সাধারণ মানুষ সংবাদপত্রের যে কোনো শব্দকে সঠিক মনে করেন। সংবাদমাধ্যম ওষুধ প্রশাসন, ওষুধের দোকান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ শব্দগুলো হরহামেশা ব্যবহার করে। যদিও শব্দগুলো হওয়া উচিত- ড্রাগ প্রশাসন, ড্রাগ স্টোর, ড্রাগ বিশেষজ্ঞ। কেননা রাষ্ট্র কর্তৃক দেওয়া লাইসেন্স-এ কোথাও মেডিসিন বা ওষুধ শব্দটি ব্যবহার করেনি। সর্বক্ষেত্রে ‘ড্রাগ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
ড্রাগ আর মেডিসিন কখনো এক নয়। উইকিপিডিয়ায় সুস্পষ্টভাবে এর ব্যাখাও দেওয়া আছে। মেডিসিন এর ব্যখায় আর্ট অব হিলিং অর্থাৎ রোগ নিরাময় ও সুস্থ থাকার প্রাচীন থেকে আধুনিক পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত ও অপ্রতিষ্ঠিত সব চিকিৎসা পদ্ধতিকে বোঝানো হয়েছে। যেমন : আয়ুর্বেদ, ইউনানী, হোমিও, তাবিজ, ঝাড়ফুঁক, মেডিটেশন, কোয়ান্টাম এবং সর্বশেষ আধুনিক এলোপ্যাথিক চিকিৎসা।
প্রচলিত আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞান ঔষধ নাম দিয়ে ড্রাগস-এর সপক্ষে সাফাই গাইলেও প্রকৃত ঘটনা হলো- ড্রাগস নিয়ে গবেষণা করে একজন, ট্রায়াল দেয় আরেকজন, ড্রাগস উৎপাদন করে একজন, বাজারজাত করে আরেকজন, ড্রাগস লেখেন (প্রেস্ক্রাইব করেন) একজন আর সেবন করেন আরেকজন। এর কোন পর্যায়ে কে কতখানি দায়িত্বশীল আচরণ করেন- বলা মুশকিল! অথচ সেই ড্রাগস লিখে ডাক্তার হন লাখপতি, ড্রাগস বেঁচে কোম্পানি হয় কোটিপতি আর সেই ড্রাগস কিনে খেয়ে ঠিক থাকে না রোগীর দেহের মতি-গতি!
খোদ চিকিৎসাশাস্ত্রের সংজ্ঞা মতে- কোনো ওষুধই নিরাপদ নয়! ওষুধ শরীরের জন্য বহিরাগত একটি রাসায়নিক পদার্থ এবং প্রত্যেকটি রাসায়নিক পদার্থেরই শরীরে কম-বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বিষক্রিয়া ও মিথস্ক্রিয়া আছে। এগুলোকে ধর্তব্যের মধ্যে না নিলেও অনিরাপদ, অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ও ব্যবহার অনুপযোগী ওষুধ খাইয়ে বিশ্বের শত কোটি মানুষকে ঠকিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো একদিকে হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফা করছে, অন্যদিকে ওষুধ কিনে খেয়ে সাধারণ মানুষ শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ তথা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। কেবলমাত্র বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে ৫২ লাখ মানুষ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছেন।
রোগ হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যেমন সুখকর পরিস্থিতি নয়, তেমনি ওষুধ নামক ড্রাগস কোনো নিরাপদ বস্তু নয়। তবু আমরা ওষুধ (আসলে ড্রাগস) খাই কারণ অনেক সময় রোগ জটিল আকার ধারণ করে বলে। সে কারণে গ্রহণযোগ্য মাত্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনায় রেখেই ওষুধ (আসলে ড্রাগস) দিতে/খেতে হয়। কিন্তু সব রোগে ওষুধের দরকার হয় না, এমনকি ওষুধে (আসলে ড্রাগস) সব রোগের সমাধানও নেই। কিন্তু সে কথা কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে একের পর এক ওষুধ (আসলে ড্রাগস) গেলানোটাই এখন ওষুধ কোম্পানিগুলোর মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে আর সে কাজে সজ্ঞানে ও খানিকটা অজ্ঞানে সহযোগিতা করে চলেছেন দেশের সেরা মেধাবী সন্তানেরা- যাঁরা কিনা ডাক্তারি পাস করে ‘মানবসেবার’ লাইসেন্স নিয়েছেন!
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ১৫% ওষুধই (আসলে ড্রাগস) নিরাপদ নয়, যার আর্থিক মূল্য ২৫০ বিলিয়ন ডলার। আর এশিয়া-আফ্রিকার কোনো কোনো অঞ্চলে ৫০% ওষুধই (আসলে ড্রাগস) মানসম্মত নয়। ওষুধ কোম্পানিগুলো রোগ নিরাময়ের জন্য কাজ করে না, তাদের লক্ষ্য ওষুধ (আসলে ড্রাগস)-এর খরিদ্দার বাড়ানো। সেজন্য যদি সুস্থ মানুষকে অসুস্থ প্রমাণ করা লাগে, সে কাজেও তারা পিছ পা হয় না!
ওষুধ (আসলে ড্রাগস)-এর যুক্তিসঙ্গত প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো যথাসম্ভব ন্যূনতম পর্যায়ে রেখে রোগীকে সর্বোচ্চ মাত্রায় সুফল প্রদানের প্রচেষ্টা চিকিৎসা-বিজ্ঞানের আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু সেখানেও ‘ব্যবসা’ ঢুকে গেছে; শুধু ঢোকেইনি, ভালোভাবে জাঁকিয়ে বসেছে! ওষুধ (আসলে ড্রাগস)-এর তাৎক্ষণিকভাবে রোগের টুটি চেপে ধরার অপূর্ব ক্ষমতাকেই আমরা শুধু আমলে নিয়ে থাকি, কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের শরীরে যে কত রকমের বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়- সেটা কেউ জানি না বা তার খবরও রাখি না!
ওষুধ (আসলে ড্রাগস) ভোগ্যপণ্যের মতো কোনো বিলাসী বস্তু নয়। ওষুধ (আসলে ড্রাগস) সেবনে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা চিকিৎসাশাস্ত্রের অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। কিন্তু আজকের বাণিজিক দুনিয়ায় সে কথা কেউ মনেই রাখেনি, মানা তো আরো দূরের ব্যাপার। বিশেষ করে নির্বিচারে এন্টিবায়োটিক সেবন করিয়ে আমাদেরকে ভয়ংকর বিপদ ও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ (আসলে ড্রাগস)-এর action-এর চেয়ে reaction-এর দিকে যিনি বেশি নজর রাখেন, তিনিই সেরা চিকিৎসক। কিন্তু বাণিজ্যিক স্বার্থ-সশ্লিষ্ট এই যুগে সে রকম রোগী-বান্ধব চিকিৎসক-এর দেখা পাওয়া সত্যিই দুরূহ। সবাই ঝটপট কেরামতি দেখাতে ব্যস্ত, তাতে যদি রোগীর দেহের ‘বারোটা’ বেজে যায়, কার কী-বা যায় আসে?
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে, প্রত্যেকটি synthetic drug-এর কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন : ডায়বেটিস-এর ড্রাগস নিয়মিত সেবন করলে সেই ড্রাগস-এ থাকা বিষাক্ত সালফার-এর প্রভাবে মানবদেহের নানা অঙ্গে পচন ধরে যায়। আবার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বেশি খেলে এনিমিয়া (হিমোগ্লোবিন সঙ্কটে রক্ত ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া), হাড় ক্ষয় বা দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বেশি খেলে পাকস্থলীতে স্বাভাবিক এসিড নিঃসরণ ব্যহত হয়। ফলে বুক জ্বালাপোড়া কমলেও স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া আজীবনের জন্য গড়বড় হয়ে যায়। এমনকি ভুল ওষুধ সেবনে অনেক মানুষের দেহের বিশেষ কোনো অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে! কিন্তু নিয়তির ওপরে হাত নেই বলে সবকিছু আমরা বিনা প্রতিবাদে মেনে নিচ্ছি। অধিকাংশ রোগে ড্রাগস না খেলেই রোগী বরং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতো, কিন্তু আমাদের সেই পর্যন্ত তর সয় না!
সুদূর প্রাচীনকাল থেকে মেডিসিনে (আর্ট অব হিলিং) নানা উপকরণ ব্যবহৃত হয়ে আসছে- মাটি, পানি, গাছ, মন্ত্রতন্ত্রসহ হরেক রকম পদ্ধতি প্রয়োগ করে রোগ নিরাময় করা হয়। অন্যদিকে আধুনিক চিকিৎসায় ল্যবে পরীক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত আবিষ্কৃত জৈব ও অজৈব অণু ব্যবহৃত হয়। এ প্রতিষ্ঠিত ও অজৈব ও জৈব অণু মানবদেহের জৈব রসায়নকে সুনির্দিষ্টভাবে প্রভাবিত করার মাধ্যমে দেহের রোগকে নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র। তাই আধুনিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত উপকরণগুলোকে ‘ড্রাগ’ বলা হয়। মেডিসিনের (আর্ট অব হিলিং)-এর বয়স প্রায় ১০ হাজার বছর আর আধুনিক ড্রাগ চিকিৎসার বয়স সবমিলিয়ে ৩০০ বছর।
সত্যি কথা বলতে কি, ওষুধ নামক synthetic drug-এর কল্যাণে নয়, রোগ ভালো হয় দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে। এ কারণেই বলা হয়- রোগ ভালো করেন ঈশ্বরে, কিন্তু ভিজিট নেন ডাক্তার! Doctors ও Drugs থেকে দূরে থাকতে চাইলে Diet ও Discipline-এর কোনো বিকল্প নেই।
মানব-শরীরের মূল সমস্যা ক্ষুধা, পিপাসা ও চিন্তা। এর সমাধান যথাক্রমে পুষ্টি, পানি ও অক্সিজেন। পরিমাণ ১/৩; মানে যখনি খাবেন, পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ পানি, এক-তৃতীয়াংশ শক্ত খাবার দিয়ে পূর্ণ করে বাকি এক-তৃতীয়াংশ বাতাসের আনাগোনার জন্য সব সময় খালি রাখতে হবে। তারপরও ঘটনাচক্রে রোগাক্রান্ত হলে মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সুস্থতার পথ-পরিক্রমা হলো- পাক-পবিত্রতা, নামাজ, রোজা, দান ইত্যাদি। এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন : ভেষজ, ব্যায়াম, দমচর্চা/ধ্যান, আকুপ্রেসার ইত্যাদির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমরা মানুষের তৈরি কৃত্রিম (বাণিজ্যিক) চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বড্ড বেশি মাতামাতি করি- যেখানে রোগ নিরাময় হোক বা না হোক, ব্যবসাটা ভালোমতোই হয় বৈকি!
অতীব দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, চিকিৎসা সেবা এখন পুরোপুরি ওষুধ-নির্ভর ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। গাদাগাদা ওষুধ সেবন কোনো মর্যাদাপূর্ণ ব্যাপার হতে পারে না। খাদ্য নির্বাচন সঠিক না হলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওষুধ কোম্পানির সবচেয়ে দামী ওষুধেও ফায়দা নাই।
সুস্পষ্ট ভাষায় জেনে রাখুন- MEDICINE বা ঔষধ কোনো বোতলে ভরা থাকে না, ট্যাবলেট আকারেও পাওয়া যায় না, এমনকি কোনো ভ্যাকসিনও ওষুধ নয়। তাহলে রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে- এমন ওষুধ কোনগুলো? চলুন, জেনে নেওয়া যাক-
Detoxification বা শরীরকে বিষমুক্তকরণ প্রক্রিয়া; আলগা তেল, সাদা চিনি, ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড (জঞ্জাল খাবার) ও কোমল পানীয় বর্জন; শরীরচর্চা, ধর্মীয় আচার পালন করা, রোজা রাখা, প্রাকৃতিক রীতি-নীতি মেনে চলা, প্রাণখুলে হাসা, শাক-সবজি আর ফলমূল খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো, সূর্যের আলো গায়ে লাগানো, জীবে প্রেম ও মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, পরিশ্রম করে ঘাম ঝরানো, ভালো বন্ধু নির্বাচন, প্রাণায়াম বা দমচর্চা, সর্বদা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা প্রদর্শন, অন্যের কথা শোনায় মনোযোগী ও আন্তরিক হওয়া, ভালো কিছু সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া, যে কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, অতীত নিয়ে মন খারাপ অথবা ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন না হয়ে সব সময় বর্তমানে থাকা, আনন্দে বাঁচা, মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা, ভালো কাজে সক্রিয় থাকা, হাঁটা, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা, নির্মল বাতাসে প্রাণভরে শ্বাসগ্রহণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মাটির স্পর্শ নেওয়া, অর্থ বুঝে ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও মেনে চলা, কারো মঙ্গল কামনায় দোয়া করা, সুরের মুর্ছনায় ডুবে থাকা, স্রষ্টার সান্নিধ্যে সময় কাটানো প্রভৃতি হলো সত্যিকারের ওষুধ- যার প্রত্যেকটির প্রাকৃতিকভাবেই রোগ নিরাময় ক্ষমতা আছে।

Leave a Reply