বিশ্বব্যাপী ৭৫% শতাংশ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষ সুগার অর্থাৎ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। আজকের দিনে একটি বড় সমস্যা ব্লাড সুগার । ওষুধের পাশাপাশি সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় বেশ কার্যকর।
গবেষণায় দেখানো হয়েছে, যখন সুগারের কোনও রোগী সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসা না করে, তখন সেটা স্বাস্থ্যের ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনাদের অবশ্যই স্বাস্থ্য এবং খাবারের উপর মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় যেগুলি অনুসরণের মাধ্যমে নিজের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের আনা সম্ভব।
RELATED: ব্লাড সুগার।
ব্লাড সুগার কি ?
সুগার কেন হয় ?
সুগার লেভেল বাড়ার কারন।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ।
সিুগার বা ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
ঘন ঘন প্রস্রাবঃ
ওজন হ্রাসঃ
ক্ষুধা ও ক্লান্তিঃ
তৃষ্ণার্ত বোধঃ
ইনফেকশন।
চামড়া অতিরিক্ত শুকিয়ে যাওয়াঃ
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায়ঃ
১. মেথি ।
২. এ্যালোভেরা।
৩. উচ্ছে।
৪. দারুচিনি।
৫. কারি পাতা।
৬. জামের বীজ।
৭. নিয়মিত হাটুন।
ব্লাড সুগার কি (What is blood sugar)
ব্লাড সুগার হল এমন একটি অবস্থা যা শরীরে রক্তের গ্লুকোজ প্রক্রিয়ার ক্ষমতা হ্রাস করে। যদি সঠিকভাবে যত্ন না নেওয়া হয়, ডায়াবেটিস রক্তে শর্করার সৃষ্টি করতে পারে, যা স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
সুগার সাধারণত ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। ডায়াবেটিস একটি জীবনধারা বা বংশগত রোগ। এটি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। ধরন অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
RELATED: প্রথম প্রর্যায়ে ডায়াবেটিসের ১০ টি লক্ষণ দেখা দেয়।
আমাদের শরীরে যখন অগ্ন্যাশয় সঠিকভাবে ইনসুলিন তৈরি করে না বা আমাদের দেহের কোষগুলো সেই ইনসুলিনকে সঠিকভাবে গ্রহণ করতে সক্ষম হয় না, তখন সেই ব্যক্তি সুগার বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
ব্লাড সুগার বা গ্লুকোজ হল আমাদের রক্তের প্রধান চিনি। আমরা যে খাবারটি খাই তার থেকে গ্লুকোজ পেয়ে থাকি। এই চিনি শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স এবং শরীরের অঙ্গ, পেশী এবং স্নায়ুতন্ত্রের পুষ্টি সরবরাহ করে।
সুগার লেভেল বাড়ার কারন (Reasons for rising sugar levels)
অধিকাংশ মানুষের ধারানা সুগার লেভের বাড়ার একমাত্র কারণ চিনি। অনেকে হয়তো জানেই না চিনি অথাবা মিষ্টি ছাড়াও কিছু জিনিস সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- ঔষধ বা ইনসুলিনের ডোজ সঠিক না থাকলে।
- অতিরিক্ত চিন্তা। মানসিক চাপেও সুগারের লেভেল বেড়ে যায়।
- ডায়েট এবং ব্যায়াম না করার জন্য।
- ইনফেকশন
- অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়গুলিতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, তাই প্রথমে এগুলি আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে।
RELATED: নিয়মিত মেথি করবে ডয়িাবেটিস নিয়ন্ত্রন।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ (Types of Diabetes)
সাধারণত দুই ধরণের ডায়াবেটিস হয়। টাইপ 1 আর টাইপ 2 । আপনার কোন ধরণের ডায়াবেটিস তা নির্ণয় করেই চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
- Type 1 – যখন শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে অক্ষম হয়, তখন টাইপ 1 ডায়াবেটিস হয়। যাদের এই ধরণের ডায়াবেটিস আছে তাদের শরীর ভালভাবে কাজ করার জন্য কৃত্রিম ইনসুলিনের উপর নির্ভর করতে হবে।
- Type 2 – এটি টাইপ 1 এর ঠিক বিপরীত। শরীর ইনসুলিন উৎপাদন করতে থাকে কিন্তু কিন্তু, এটি এটিকে অন্যভাবে ব্যবহার করে, এবং মানব দেহের কোষগুলি কার্যকরভাবে এতে সাড়া দেয় না। এটি সবচেয়ে সাধারণ ডায়াবেটিস ধরনের এবং এটি স্থূলতার সাথে যুক্ত বলে পরিচিত।
অন্যান্য ধরণের ডায়াবেটিসের মধ্যে রয়েছে-
- গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস
- মনোজেনিক ডায়াবেটিস
- সিস্টিক ফাইব্রোসিস-সম্পর্কিত ডায়াবেটিস
সুগার বা ডায়াবেটিসের ৭টি লক্ষণঃ
প্রতিবেদনে বলা হয় ডায়াবেটিসের লক্ষণ প্রথম পর্যায় বুঝে যদি চিকিৎসা করা যায় তাহেল জীবনের অনেকটাই ঝুঁকি হ্রাস করা যায়। ডায়াবেটিসের আগে শরীরে নীচের এই লক্ষণগুলি আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
১. ঘন ঘন প্রস্রাবঃ
প্রথমে নোটিশ করবেন আপনার দিনে কতবার প্রস্রাব হয়। কারণ একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্যক্তির দিনে ৬ থেকে ৭ বার প্রস্রাব হওয়া নরমাল। তবে যদি তার থেকে বেশি প্রস্রাব পায়, তাহলে এটি সন্দেহের কারণ হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে একজন সুগার আক্রান্ত ব্যক্তির সুগার লেভেল বেড়ে গেলে ঘন ঘন প্রস্রাব পায়। এদের শরীরে রক্তে চিনির মাত্রা বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত চিনি, কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। তাই কিডনি রক্ত পরিশোধন করার জন্য ঘন ঘন প্রস্রাব পায়।
২. ওজন হ্রাসঃ
ওজন হ্রাস বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে বলা হয়ে থাকে, ডায়াবেটিসের শুরুর দিকে হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমে যায়। এইধরনের লক্ষণ দেখলে একবার টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভালো হবে।
ইনসুলিনের অভাব রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজ শরীরের কোষগুলিতে পৌঁছতে পারে না এবং কোষগুলি শক্তি হিসাবে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না। যার ফলে ওজন হ্রাস হয়।
৩. ক্ষুধা ও ক্লান্তিঃ
যদি আপনার সুগার হয়, তাহলে দিনের মধ্যে বেশিরভাগ সময় খিদে পাবে এবং শরীরে ক্লান্তি অনুভব করবেন। অতিরিক্ত পরিমাণে খিদে পাওয়া বা ক্লান্তি লাগা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।
ইনসুলিনের তৈরি না হলে, রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজ শরীরের কোষগুলিতে পৌঁছতে পারে না যার ফলে সারাদিন শরীর ক্লান্ত লাগে। একজন স্বাভাবিক ব্যক্তির চেয়ে আপনি বেশি ক্ষুধার্ত বোধ করবেন এবং ক্লান্ত অনুভব করবেন।
৪. তৃষ্ণার্ত বোধঃ
অতিরিক্ত তৃষ্ণার্ত বোধ সুগারের প্রথম লক্ষণ। সুগার হওয়ার শুরুর দিকে রোগীর তৃষ্ণার্ত বোধ করে। যেহেতু সুগারের রোগীরা ঘন ঘন প্রস্রাব করে, তাই তাদের দিনে ঘন ঘন পিপাসা পায়।
৫. ইনফেকশনঃ
আপনার শরীরে কি ঘন ঘন ইনফেকশন হয়? অথবা ইনফেকশন হলে ক্ষত সারছে না? তাহলে আপনি সুগারে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ ইনফেকশন একটি ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষত বা ইনফেকশন হলে স্বাভাবিকের তুলনায় সারতে অনেকটা সময় লাগে।
৭. চামড়া অতিরিক্ত শুকিয়ে যাওয়াঃ
সাধারণ শীতকালে অথবা অন্য কারণে আমাদের চামড়া শুকিয়ে যায়। তবে সবসময় ঘন ঘন চামড়া শুকিয়ে যাওয়া সুগারের লক্ষণ। কারণ এই রোগের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার স্কিন আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে।
সুগার কমানোর ৭ টি ঘরোয়া উপায়ঃ
বর্তমানে সুগার কমন হলেও এটি একটি মারাত্মক রোগ। সঠিকভাবে এর চিকিৎসা না করা হলে অথবা সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা না হলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশ বেড়ে যায়। তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা চালাতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ওষুধের পাশাপাশি নীচের এই সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে চলতে হবে।
১. মেথি (Fenugreek)
ভারতীয় রান্নাঘরে এই ভেষজ উপাদানটি সর্বদা পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, গ্লুকোজ সহনশীলতা উন্নত করতে, রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে মেথি এটি টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। ব্যবহার করা যেতে পারে।
- দুই টেবিল চামচ মেথির বীজ জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে এই জল পান করুন। এটি গ্লুকোজের লেভেল কমাতে সহায়তা করে।
২. অ্যালোভেরা (Aloe vera)
আমরা সকলেই জানি অ্যালোভেরায় ভেষজ গুন রয়েছে। এই উপাদানটি স্কিন এবং স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটির স্বাদ একটু তেতো হলেও এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে উপকার করতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
- দিনে দুবার এক কাপ করে অ্যালোভেরা জুস পান করুন।
৩. উচ্ছে (Bitter gourd)
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় উচ্ছে। উচ্ছেতে দুটি প্রয়োজনীয় যৌগ রয়েছে যা শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- সকালে খালি পেটে উচ্ছে রস খেলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে প্রতিদিন নয়। অথবা আপনি খাবারের সাথে উচ্ছে যোগ করতে পারেন।
৪. দারুচিনি (Cinnamon)
দারুচিনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং ইনসুলিন কার্যকলাপের সূচনা করে শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে যা টাইপ -২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- উষ্ণ গরম জলে আধ চা চামচ দারুচিনি মিশিয়ে নিন এবং প্রতিদিন একবার সেবন করুন।
৫. কারি পাতা (Curry leaves)
কারিপাতা খাওয়া আপনার শরীরে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা হ্রাস করবে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাবে।
- কারি পাতা খাবের বা সালাদে খেতে পারেন।
৬. জামের বীজ (Jamun seed)
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় জামের বীজ। শুনতে হয়তো অবাক হবেন জামের বীজে রয়েছে সুগার নিয়ন্ত্রণের চাবি। জামে রয়েছে হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য, যা রক্তে শর্করা কমাতে সক্ষম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পূর্ণ যা ডায়াবেটিসে উপকারী।
- জাম রোদে শুকিয়ে বীজ বের করে নিন। এই বীজ মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিন। একগ্লাস জলে এক চা চামচ জামের বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে খান। উপকার পাবেন।
৭. নিয়মিত হাঁটুন (Walk regularly)
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় আলোচনা করতে গেলে আমরা হাঁটার কথা এড়িয়ে চলতে পারি না। নিয়মিত ২৫-৩০ মিনিট হাঁটলে সুগার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম ওজন হ্রাস করতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারেন।
Summary:- ডায়াবেটিস সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না করা গেলেও এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে আমরা আমদের হেলথ সুস্থ রাখতে পারি।
Frequently Asked Questions: Q. মিষ্টি খেলেই কি সুগার হয়? A. শুধুমাত্র চিনি বা মিষ্টি খেলেই সুগার হবে তা নয়। মানসিক চাপেও সুগার মাত্রা বাড়ে। Q. একটি সুগারের রোগীর নিয়মিত কতক্ষণ হাঁটা উচিত? A. একজন সুগারের রোগীর নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট হাঁটা উচিত। Q. মেথি কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? A. মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ কাজ করে। Q. কতটা পরিমাণ মেথি খাওয়া ভালো খাওয়া ভালো? A. সুগারের লেভেলের উপর নির্ভর করে একজন সুগারের রোগীদের কতটা পরিমাণ মেথি খেতে পারবে। সাধারণত ৩ থেকে ৫ গ্রাম মেথি খাওয়া কথা বলা হয়। আসা করি উপরের ৭টি ঘরোয়া উপায় মেনে চললে মরন ব্যাধি ডিায়বেটিস থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি ইনশালাল্লাহ।