ছাগল নিয়ে কিছু কথা । যা আপনাকে সত্যি চমকে দিবে

ছাগলকে কখনো হেলাফেলা করবেন না, ছাগল অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী!
• সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই ছাগল আর মানুষের সহ-অবস্থান। গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে মানুষ সর্বপ্রথম ছাগলকে পোষ মানাতে সক্ষম হয়েছিল। শিকারী-সংগ্রাহক চরিত্র থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজে মানব-সভ্যতার পরিবর্তনের সূত্রপাতও মূলত ছাগলকে পোষ মানানোর মধ্য দিয়েই। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুসারে, প্রাথমিক কালের ক্যালিবার্টেড ক্যালেন্ডারের ১০,০০০ বছর আগে ইরানে ছাগল গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
• মানুষকে হেদায়েত করার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই নবুয়্যত লাভের আগে শিশুকালে/বাল্যকালে ঘটনাচক্রে ছাগল চড়িয়েছেন বা ছাগল লালন-পালনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। মানে নবী-রাসূলকে প্রথমে ছাগল চড়ানোর ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, তারপর মানুষকে হেদায়েত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে!
• ছাগল (Capra aegagrus hircus) হলো C. aegagrus domesticated-এর উপপ্রজাতি, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের বন্য ছাগল থেকে আগত। ছাগল প্রাণীদের বোভিডি পরিবার এবং ক্যাপ্রিনি উপপরিবারের সদস্য, মানে প্রাণীটি ভেড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। পৃথিবীতে ৩০০ প্রজাতিরও বেশি ছাগল রয়েছে।
• ইউরোপ থেকে প্রথম দিকে আমেরিকায় বসবাস করতে যাওয়া অভিবাসীদের সঙ্গী হয়েছিল ছাগল। ১৯০৪ সালে আমেরিকার সেন্ট লাওস-এ আয়োজিত প্রথম বিশ্ব-মেলায় দুগ্ধজাত ছাগলের পাশাপাশি ৩০০টি অ্যাঙ্গোরা ছাগলের প্রদর্শনী করা হলে ছাগলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
• প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ছাগল পছন্দ করতেন। তাঁর আমলে হোয়াইট হাউসে যত পোষা প্রাণী ছিল, তাদের মধ্যে দু’টি ছাগল ন্যানি ও নানকো ছিল।
• জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১১ সালের হিসাব অনুসারে গোটা বিশ্বে ৯২৪ মিলিয়ন ছাগল রয়েছে।
• বংশবৃদ্ধি এবং পুষ্টির স্থিতির উপর নির্ভর করে ছাগল তিন থেকে ১৫ মাস বয়সের মধ্যে যৌবনে পৌঁছে। অনেক প্রজননকারী নারী ছাগল প্রাপ্তবয়স্ক ওজনের ৭০% না পৌঁছানো পর্যন্ত প্রজনন স্থগিত রাখে।
• আফ্রিকার মাসাই ছাগল, ভারতের যমুনাপাড়ি ছাগল এবং চীনা জাতের ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গলের তুলনায় ৪০%-৬০% বেশি পরিমাণে দুধ ও মাংস উৎপাদন করতে পারলেও ২০%-৩৫% ছাগল জন্মের সময় মারা যায়; যেখানে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মৃত্যুর হার মাত্র ৫%-১০%। সে কারণে এর প্রজনন বেশি ঘটে এবং এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতির ছাগলকে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতার বিচারে সেরা হিসেবে নির্বাচিত করেন। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ১৪ মাসে দু’বার বাচ্চা প্রসব করে এবং প্রতিবার ১-৫টি করে বাচ্চা দেয়। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পাওয়া যায় চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রত্যন্ত জনপদে।
• ছাগলের বাচ্চাকে kid বলা হয় এবং ছাগলের বাচ্চা জন্মদান থেকেই kidding (যার অর্থ ‘মজা করা’) শব্দটির উদ্ভব!
• ছাগলের উপরের চোয়ালে দাঁত থাকে না। তার পরিবর্তে একটি শক্তিশালী dental pad (বিশেষ ধরনের উপরস্থ ঠোঁট) রয়েছে- যার সাহায্যে কাঁটাযুক্ত ডাল থেকেও কোমল পাতাগুলো আলাদাভাবে ছিঁড়ে খেতে পারে!
• ছাগলের RECTANGULAR PUPILS আছে- যা তাদেরকে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় দৃষ্টিশক্তির একটি পূর্ণ পরিসীমা দেয়। ছাগল তার পরিধিতে ৩২০ ডিগ্রি থেকে ৩৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখতে পারে। মানে ঠিক তার পেছনের অংশ ব্যতীত সবকিছু দেখতে সক্ষম। তবে সমস্যা (অসুবিধা) হলো ছাগল মাথা নাড়িয়ে উপরে বা নিচে তাকাতে পারে না। এসব কারণে ছাগল কখনো পিছু হটে না বা পিছন দিকে যেতে/হাঁটতে পারে না।
• ছাগল রোমন্থক প্রাণী। এদের চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট পাকস্থলী থাকে- যা ছাগলকে ঘাস এবং খড়ের মতো শক্ত খসখসে খাবার হজম করতে সাহায্য করে। খাদ্য প্রথমে rumen-এ প্রবেশ করে, তারপর honeycombed reticulum-এ গিয়ে অপাচ্য বস্তু আলাদা হয়, তারপর omasum chamber হয়ে সবশেষে প্রকৃত পাকস্থলীতে ঢোকার আগেই খাবার থেকে জল অপসারিত হয়ে যায়।
• আমরা সবাই জানি- বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের আগে পর্যন্ত আমাদের জাতীয় পশু ছিল ছাগল! এখনো পাকিস্তানের জাতীয় পশু ছাগল। এতোকিছু থাকতে ছাগলকে জাতীয় পশু হিসেবে বেছে নেওয়ার অবশ্যই যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
• পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল ছাগলের মাংস ও দুধ।
• ছাগলের দুধ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় তরল পানীয়। সমগ্র বিশ্বজুড়ে মানুষ অন্য যে কোনো প্রাণীর চেয়ে ছাগলের মাংস ও দুধ বেশি খায় ও পান করে। ছাগলের দুধ বেশি পান করার কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে সমজাতীয় অন্যান্য প্রাণীজ দুধের চেয়ে হজম করা তুলনামূলক সহজ, এমনকি lactose অসহিষ্ণু মানুষদের পক্ষেও। এতে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-এর পরিমাণও বেশি থাকে।
• ছাগল কখনো মূর্ছা যায় না বা অজ্ঞান হয় না। তবে তারা যখন উত্তেজিত হয় বা চমকে ওঠে, তখন ছাগলের পেশী জমাট বেঁধে যায়, যার ফলে তৎক্ষণাৎ নেতিয়ে পড়ে। তখনো তারা সম্পূর্ণ সচেতন থাকে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাদের পেশীগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। যদিও এই আচরণের ভিডিও মায়োটোনিক প্রজাতির ছাগলদেরকে অন্তর্জালে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
• বিশ্বখ্যাত কাশ্মীরী সোয়েটার ছাগল-এর বিশেষ কিছু পশম থেকে তৈরি। নরম তুলতুলে এবং অত্যাধিক ব্যয়বহুল কাশ্মীরী সোয়েটার বানাতে বিশেষ প্রজাতির ছাগলের বাছাইকৃত পশম লাগে। ছাগলের চামড়া থেকে সিল্কি উপাদান আলাদা করার প্রক্রিয়াটি হাতে করতে হয় বলে কাজটি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। প্রত্যেকটি সোয়েটার তৈরি করতে কমপক্ষে দুটি ছাগল দরকার হয়।
• খেয়াল করলে দেখবেন- কুকুর আর ছাগলের মধ্যে কুকুর বেশি বাচ্চা দেয়, তারপরও পথে-ঘাটে কুকুরের তুলনায় ছাগলই বেশি দেখা যায়। মানুষ ছাগলকে জবেহ করে খায়, তারপরও ছাগল সংখ্যায় কমে না। এর কারণ ছাগল সন্ধ্যা হলেই ঘুমিয়ে যায় আর ভোরে জেগে ওঠে- যেটা রহমত ও বরকত বর্ষণের মুহূর্ত।
• ইথিওপিয়ান কিংবদন্তি অনুসারে- ছাগল কফি আবিষ্কার করেছে! একজন ছাগল পালনকারী একদিন হঠাৎ লক্ষ্য করলেন যে, তার ছাগলগুলো কফি-ঝোপের লাল বেরি খাওয়ার পরে অতিরিক্ত ভাবের সঙ্গে ঝাঁকুনি দিচ্ছে। লাল বেরি গাছ ছাগলের দলটির ওপরে এমন শক্তিদায়ক প্রভাব ফেলেছিল যে, এর মাধ্যমেই কফির উত্তেজক বৈশিষ্ট্যগুলো সর্বপ্রথম মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়।
• ছাগলের অবিশ্বাস্য কিছু তৎপরতা এবং দেহের ভারসাম্য রয়েছে- যা সচরাচর দৃষ্টিগোচর হয় না। শুনে হয়ত অবাক হবেন যে, প্রয়োজন হলে ছাগল গাছেও চড়তে পারে! তবে তারা অনিশ্চিত পাথুরে পরিবেশে টিকে থাকতে পারে না। পরিষ্কার, দুর্গন্ধমুক্ত, উষ্ণ, বায়ু এবং আলো প্রবেশ করে- এমন স্থান ছাগলের পছন্দ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, গোবরযুক্ত, স্যাঁত-স্যাঁতে, বদ্ধ, অন্ধকার ও গন্ধময় পরিবেশে রাখলে ছাগল অসুস্থ হয়ে যায়।
• ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে ছাগলের উচ্চারণে ভিন্নতা আছে। মানে একটি নির্দিষ্ট ছাগলের কণ্ঠস্বর ভিন্ন দেশের ছাগলের থেকে আলাদা হবে।
• মহান আল্লাহ্ কোনোকিছুই অহেতুক সৃষ্টি করেননি। প্রত্যেকটি সৃষ্টির পেছনে মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তাই বলে সকল সৃষ্টির উল্লেখ পবিত্র কোরআন-এ পাওয়া যায় না। যেসব সৃষ্টির কথা পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে, নিশ্চয় সেগুলোর বিশেষ মাজেজা রয়েছে। ছাগল প্রসঙ্গ উল্লেখ আছে পবিত্র কোরআন-এর ৬নং সূরা আনআম-এর ১৪৩ ও ১৪৬নং এবং ২০নং সূরা তা হা-এর ১৮নং আয়াতসমূহে।
• কথা প্রসঙ্গে আমরা প্রায়ই বলি- ‘ছাগলে কী না খায়?’ কিন্তু জেনে রাখুন- ছাগল সামনে যা কিছু পায়, তার সবটা খায় না; এমনকি যেটুকু খায়, সেটুকুও নির্বিচারে নিজের ভেতরে চালান করে দেয় না! ছাগল প্রথমে পরখ করে, তারপর গন্ধ শুঁকে নিশ্চিত হয়ে তবেই খায়; যেখানে মানুষ না জেনে, না বুঝে, এমনকি না দেখে অনেক কিছু গলধঃকরণ করে ফেলে (আসল ‘ছাগল’তো ওইগুলোই)!
• আপনি কি শরীরে প্রবাহমান রক্তকে পরিষ্কার করতে/রাখতে চান? দ্রুত রক্ত বাড়ে- এমন খাবার শরীরে ঢোকাতে চান? সেক্ষেত্রে হাতের কাছে পাওয়া যায়- এ রকম বিভিন্ন সবুজ পাতার রস প্রতিদিন সেবন করুন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কোন কোন সবুজ পাতা খাওয়া যাবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি ছাগল যোগাড় করতে হবে। তারপর আপনার বাড়ির চারপাশে যত গাছপালা আছে, সবগুলোর পাতা ছিঁড়ে এনে ওই ছাগলের সামনে ধরুন…। দেখবেন- ছাগল নাগালে পাওয়া মাত্রই খাবে না, প্রথমে পরখ করবে, গন্ধ শুঁকবে, তারপর কিছু পাতা খাবে, অল্প কিছু পাতা খাবে না। ছাগল যেসব পাতা খাবে, সেগুলোর রস আপনি নির্দ্বিধায় পান করতে পারেন…!

Leave a Reply