জীবনের কঠিন সত্যি কথা গুলো কী?

১. মায়ের মতো আপন কেও হয় নাঃ

‘মা’ ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু তার পরিধি অসীম। সবার কাছে এই সত্যই প্রতিষ্ঠিত যে, মায়ের চেয়ে আপন কেউ নেই। সবচেয়ে কাছের মানুষ তিনি। মানুষের খুব প্রিয় অন্য যে কোনো কিছুর সঙ্গে যখন তুলনা আসে তখনো মায়ের সঙ্গেই তা করা হয়। মায়ের আসন সবার ওপরে। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত । মহান আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা,স্নেহ ,মায়া মমতার কোটি কোটি ভাগের অতি সামান্য মায়ের মাধ্যমে বর্হিপ্রকাশ করেছেন।  দেশ বা নিজের জন্মস্থানকেও মাতৃসম ভাবা হয়। মায়ের জন্য প্রাণ দিতেও পিছপা হয় না মানুষ।

২. গরীবের কোন ভালো বন্ধু হয় নাঃ

প্রকৃত বন্ধুত্ব কখনই  ধনী ,গরীব ,টাকা দেখে হয়না। আর কথা যদি হয় আর্থিক অবস্থা নিয়ে, সে ক্ষেত্রে আরো একটা সোজা উত্তর দিচ্ছি। গরীব হওয়ার কারণে অনেক সময়ই ছোটবেলার কাছের বন্ধুর সামনে যেতে লজ্জা পান অনেক, তাই এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা সেই স্বচ্ছল বা প্রতিষ্ঠিত বন্ধুকেই পালন করতে হবে; সে নিজে যদি সামনে এসে ধরা দেয়, তখন আর কোনো অর্থের হিসাব সেখানে টিকবেনা। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গরীবের তেমন বন্ধু থাকেনা কথায় আছে তেলের মাথায় সবাই তেল দেয়।

৩. মানুষ সুন্দর মনকে খোঁজে না সুন্দর চেহারা খোঁজেঃ

সুন্দর তো তাই যার কাছাকাছি এলে নিজেকে সুন্দর মনে হয়।সুন্দর তো সেই জিনিস যা মানুষের অন্তরের খোরাক যোগায়। সুন্দর হওয়ার জন্য লম্বা,ফরসা বা কোনো বিশেষ কিছু হওয়া লাগেনা।সুন্দর আপনিই প্রকাশিত হয় । আমরা যা তাতেই আমরা সুন্দর।সৌন্দর্যকে কী কখনো পরিমাপ করা যায় নাকি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয়া যায়? একজনের সাথে অন্যজনের সৌন্দর্যের তুলনা হয় কীভাবে ? সবাই যার যার মতো অনন্য। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ফুলই সুন্দর,প্রত্যেকটি ফুলই মোহনীয়। প্রত্যেকটি ফুলই তার রূপ রস গন্ধ দিয়ে মানুষকে মোহিত করে। কিন্তু কোন ফুলটি সবচেয়ে বেশি সুন্দর তা মানুষের পক্ষে নির্ধারণ করা অসম্ভব। রাতের আকাশের উজ্জ্বল তারা, ভরা পূর্ণিমার চাঁদের আলো, ভোর সকালে সূর্যোদয়ের সোনালী মুহূর্ত কিংবা প্রদোষ-কালে পশ্চিমে অস্ত যাওয়া সূর্যের রক্তিম আভা কোনটি বেশি সুন্দর ? আসলে এগুলোর একটির সাথে অপরটির কোনো তুলনা চলেনা।

এই প্রত্যেকটি মুহুর্তই মানুষের জন্য উপভোগ্য।সুন্দর মাত্রই মানুষকে আনন্দ দেয়,মানুষকে তৃপ্ত করে,মানুষের মনে প্রাণের সঞ্চার করে।কোনো মানুষ যদি সত্যিই সুন্দর হয় তা তার চলায় বলায় ,আচরণে,অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পায়। কিন্তু একজনের সাথে অন্য জনের বাহ্যিক চেহারার তুলনা দিতে যাওয়া বোকামি নয় কি? আসলে বাহ্যিক চেহারাকে আমি কখনোই সৌন্দর্য বলতে পারিনা কারন তা লালসার উদ্রেক ঘটানো ছাড়া কিছুই করেনা। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঐ সুন্দর চেহারার মানুষদের আচরণ আমাকে ব্যথিত করে। দিনশেষে সুন্দর চেহারার চেয়ে সুন্দর সমঝদার হৃদয়ের মানুষের কাছেই তো নিজেকে সমর্পনের ইচ্ছা হয়। সংসারের শেষ প্রান্তে এসে সুন্দর হৃদয়ের মানুষেরাই কী জয়ী হয় না? কেননা তাদের হৃদয়ের উদারতাই তো সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত করে তাদেরকেই ।

আমি বা আপনি শুধু আমাদের আকার আকৃতি,চেহারার মধ্যে সীমাবদ্ধ নই এটা খোলস মাত্র, এর বাইরেও আমরা অনেক কিছু। কে জানে কার অন্তরের মাঝে  ক্রন্দন ধ্বনি লুকায়িত আছে? হয়তো তা অপ্রকাশিতই থেকে যাবে।যাকে হয়তো কখনোই শব্দের শৃঙ্খলে বাধা যাবেনা। হাজারও দুঃখ-কান্নার মাঝেও যে এ হৃদয়গুলো আজও মানুষকে ভালোবাসা বিলিয়ে যাচ্ছে তা কি জীবনের সৌন্দর্য নয়? সত্যিকার অর্থে এ নীরব কান্নাই তো তাদের জীবনকে পূর্নতা দান করেছে,আর তাদেরকে করে তুলেছে অসাধারন। এই পৃথিবীর প্রতিটি হৃদয় এবং প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান। তাই প্রতিটি মানুষের মধ্যে সুপ্ত মহৎ হৃদয়গুলিকে মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করতেই হয়। যে হৃদয় গুলি প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য,পরস্পরের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হওয়ার জন্য। সে হৃদয়গুলিই তো প্রকৃত সৌন্দর্যের দাবিদার। যে মহৎ হৃদয় গুলো তাদের হৃদ্যতা-পূর্ণ নিঃস্বার্থ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে রচনা করেছে স্বর্গ, সে তো অমূল্য। আর তা মানুষের মনে সঞ্চার করে প্রাণের। হয়তো এখানেই নিহিত রয়েছে মানব জীবনের সৌন্দর্য। তাই বলব সুন্দর চেহারা না খোঁজে সুন্দর মন খোঁজেন মনে শান্তি পাবেন।

৪. সম্মান শুধু  টাকার আছে মানুষের নেইঃ

টাকা দিয়ে ঘড়ি কেনা যায় কিন্তু সময় নয় । টাকা দিয়ে প্রাসাদ গড়া যায়, শান্তির নীড় নয় । টাকা দিয়ে বই কেনা যায়, কিন্তু জ্ঞান নয় । টাকা দিয়ে বিত্তশালি হওয়া যায় কিন্তু আদর্শবান হওয়া যায়না । টাকা দিয়ে সুন্দর বিছানা বানাতে পারেন কিন্তু ঘুম নয়। টাকা দিয়ে ডাক্তার নিয়ে আসতে পারেন কিন্তু সুস্বাস্থ্য নয় । টাকা দিয়ে ওষুধ কিনতে পারেন কিন্তু আরোগ্য নয় । টাকা দিয়ে রক্ত কিনতে পারেন কিন্তু জীবন নয় । টাকা দিয়ে বউ পেতে বা সঙ্গী পেতে পারেন কিন্তু ভালবাসা নয় । তার পরেও মানুষ টাকার জন্যই বেশির ভাগ সময় সম্মান করে।

৫. মানুষ যাকেই বেশি ভালবাসে সে বেশি কষ্ট দেয়ঃ

ভালোবাসার কেনো কষ্ট দেয় তা নির্দিষ্ট করে তো বলা যাবে না। তা আপনার ভালোবাসার মানুষের আচরণ, চরিত্র ও ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

হ্যাঁ, তবে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে— আপনি যাকে বেশি ভালোবাসবেন, সঙ্গত কারণেই তাঁর থেকে বেশি ভালোবাসা চাইবেন। এবং চাইবেন, সে যেন সম্পূর্ণ আপনার মনের মতো হয়। আপনার ইচ্ছে মাফিক চলে; আপনার সবকিছুকে গুরুত্ব দেয়। ইত্যাদি। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে তাঁর থেকে সামান্য ত্রুটি দেখলেই— আপনি অনেক বেশি কষ্ট পাবেন। আপনার হৃদয়ে ভাঙচুর হবে। এটাই স্বাভাবিক।

আর ভাই, কেউ কারো মত নয়। প্রত্যকেরই মাঝে কিছু না কিছু গ্যাপ ও দূরত্ব থাকে। ইচ্ছা, ভাবনা ও আচরণে পার্থক্য থাকে। তাই সব সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে হয় ধৈর্য্য ও কম্প্রোমাইজের মধ্যে দিয়ে। অপরজনের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে।

সর্বশেষ কথা হলো— অবৈধ ভালোবাসার ক্ষেত্রে সাধারণত কষ্টই পাওয়া যায়। কেননা তা হারাম। আল্লাহ তা’আলার অবাধ্যতা। তাই আপনার রব ও রাসূলকেই বেশি ভালোবাসুন। আপনার এই ভালোবাসা বৃথা যাবে না, ইনশাআল্লাহ।

৬. মানুষ যখন হাসে মন থেকে খুব কম মানুষই হাসে কিন্তু যখন কাদে মন থেকেই কাঁদেঃ

এটাই বাস্তব  মানুষ শত কষ্ট বুকে নিয়ে অন্যের সামনে হাসে ,বুঝতে দেয়না তার কষ্ট আবার  ঐ মানুষটাই যখন কষ্ট সইতে না পেরে কাঁদে তখন মন থেকেই কাঁদে।

৭. বিপদেই বন্ধুর পরিচয় মিলেঃ

প্রীতি থেকে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। হীনতা, দীনতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতার বিচারে প্রকৃত বন্ধুত্বের বিচার হয় না। নিঃস্বার্থ আত্মিক ও পারস্পরিক প্রীতির বন্ধনে যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়, এমন বন্ধুত্বই প্রকৃত বন্ধুত্ব। দুঃখ, বিপদ, লাঞ্ছনা এসব বিরুদ্ধাবস্থাকে মাড়িয়ে যে বন্ধু আরেক বন্ধুর পাশে দাঁড়ায়, সেই তো প্রকৃত বন্ধু।

৮. টাকার লেনদেনে গেলেই মানুষের প্রকৃত চেহারা ফুটে ওঠেঃ

কথায় আছে কাউকে টাকা লোন দেওয়ার আগে নিজেকে মহান মনে হয়। আর টাকা চাইতে গেলে নিজেকে ভিখারি মনে হয়।

কেউকে টাকা লোন দেওয়ার সময় মনে রাখবেন আপনার ১ জন শত্রু বাড়ল।

৯. মানুষ যখন একাকিত্ববোধ করে তখন আপনজনের পাশে থাকাটা খুব প্রয়োজনবোধ করেঃ

আমরা মানুষরা কি একা থাকতে পারি? উত্তর আসবে- পারি না। কারণ, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে পৃথিবীতে একা রাখেননি। পৃথিবীর প্রথম মানবের জন্য তিনি সঙ্গী সৃষ্টি করে পাঠিয়েছেন একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর জন্য। শুধু মানুষ নয়; সৃষ্টি জগতের কোনো সৃষ্টিই একা নয়। আমরা মানুষেরা একা থাকতে চাই না। খুব কম মানুষই চায় একাকী থেকে জীবন কাটাতে। কেউ পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে একা থাকে, কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছায়। যারা একাকী জীবন বা একাকীত্বকে উপভোগ করতে চায় বা পারে বা কিভাবে করতে হয় জানে তারাই একাকী পাড়ি দেয় জীবন নামক অজানা ও রহস্যময় সমুদ্র, তাই আপনজনের পাশে থাকাটা খুব প্রয়োজনবোধ করে।

১০. লোভ , হিংসা , অহংকার এই৩টি জিনিস মানুষের পতন ঘটায়ঃ

তিন বস্তু মানুষকে ধ্বংস করে #লোভ, হিংসা ও অহংকার। _আল-হাদিস

Leave a Reply