নেতিবাচক মানুষদের থেকে দূরে থাকুনঃ

আজকের আলোচনা করব  িক ভাবে নেতিবাচক মানুষদের থেকে দূরে থাকবেনঃ

জীবনযাত্রার নানান ঘটনার চাপে সবাই কমবেশি অকৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে। গত এক সপ্তাহের ঘটনাগুলো যদি মনে করেন, তবে কমপক্ষে একটা এমন ঘটনা পাবেন যেখানে একজন মানুষ আপনাকে সাহায্য করেছে কিন্তু বদলে তাকে তার প্রাপ্য সম্মান বা ধন্যবাদটুকু দেওয়ার সুযোগ হয়নি।

কিছু ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে না পারলেই যে আপনি অকৃতজ্ঞ হিসেবে গন্য হবেন তা কিন্তু নয়। তবে কিছু মানুষ আছেন যারা সর্বক্ষেত্রেই অকৃতজ্ঞ। এই মানুষগুলো মনে করে নেন অন্যদের সাহায্য পাওয়াটা তার অধিকার এবং সেজন্য ওই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আবার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণেও একজন মানুষ সাময়িকভাবে অকৃতজ্ঞ হয়ে উঠতে পারে। এই দুধরনের মানুষের মধ্যে তফাৎ খুঁজে পাওয়াটা মুশকিল।

মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে জানান হল অকৃতজ্ঞ মানুষ চেনার সম্ভাব্য কিছু উপায়।

১.  সন্তুষ্টি নেইঃ

অকৃতজ্ঞ মানুষগুলোর জীবন যতই ভালো যাক না কেনো তারা কখনই খুশি হতে পারেনা। জীবনে যতই প্রাপ্তি আসুক না কেনো তাদের চাহিদার কোনো সীমা থাকে না। তারা সবসময়ই কোনো না কোনো কিছুর অর্জনের চেষ্টায় মত্ত। জীবনে সফল হওয়া অদম্য চেষ্টা থাকা সাধারণত ভালো দিক। তবে আপনার যা আছে সেটুকুর মূল্যায়ন না করা, সেগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ না হওয়া কখনই ভালো দিক নয়।

২.  হিংসাপরায়নঃ

এই মানুষগুলো অন্যের প্রাপ্তিগুলো যখন দেখে, তখন তা নিজের জন্য আশা করা শুরু করে। তবে সেটা অনুপ্রেরণার দৃষ্টিতে নয়। তারা নিজের জীবনকে সবসময় অন্যের সঙ্গে তুলনা করে। ‘অন্যের কি আছে যা আমার নেই’ এই হিংসায় তারা নিমজ্জিত থাকে, তবে ‘আমার যা কিছু অন্যের নেই’ সেদিকে কৃতজ্ঞা নেই।

খিটখিটে মেজাজ: অকৃতজ্ঞ মানুষগুলো খুব সহজেই রেগে যায়। অনেকদিন আগের ঘটা কোনো ঘটনা নিয়ে তারা ক্ষোভ পুষে রাখে। আবার এই মুহূর্তে কিছু একটা ঘটছে যা তার অপছন্দ সেটাও তার মেজাজ বিগড়ে দিতে পারে।

৩.  নেতিবাচক প্রত্যাশাঃ

 

অকৃতজ্ঞ মানুষগুলোর বেশিরভাগই অতীতে বড় কোনো মানসিক কষ্টের শিকার হয়েছেন বা এখনও হয়ে যাচ্ছেন। এই অতীত অভিজ্ঞতার কারণে তারা ইতিবাচক কোনো কিছু আশা করার সাহস হারায়। তাদের ধারণা তার সঙ্গে ভালো কিছু হওয়া কখনই সম্ভব নয়।

৪.  তাদের চাওয়ার শেষ নেইঃ

বেশিরভাগ মানুষই অন্যের কাছে কোনো কিছু চাইতে কুন্ঠাবোধ করে। তবে অকৃতজ্ঞ মানুষগুলোর এই সমস্যা নেই। তারা খুব সহজেই অন্যের কাছে কিছু চাইতে পারে। আর তাদের চাওয়ার কোনো শেষ নেই। সবসময়ই তাদের কিছু না কিছু প্রয়োজন। তাদের ধারণা আপনার সহযোগিতা তাদের পাওনা, তাই এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা হয়ত আপনার জন্য একবার ভালো কিছু করেছিল, এখন আপনার কাছ থেকে ১০টি উপকার সে নেবে।

আর আপনি যদি কোনো কারণে তাদের উপকার বা সাহায্য করতে না পারেন, তবে তা সে যেমন ভুলবে না, তেমনি আপনাকেও ভুলে যেতে দেবেনা।

৫.  অন্যদের ব্যাপারে তারা চিন্তিত নয়ঃ

অকৃতজ্ঞতা থেকেই তৈরি হয় স্বার্থপরতা। অন্যরা তাদের জন্য এটা ওটা করবে এটাই তাদের কাছে স্বাভাবিক ঘটনা হওয়ায় সেই উপকারগুলো করতে অন্যের কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে সেদিকে তাদের নজর থাকে না। কারণ সেটা তাদের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে না কখনই।

৬.  নিজের প্রয়োজন ছাড়া অন্যের জন্য সময় নেইঃ

এই মানুষগুলো তখনই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে যখন ওই ব্যক্তির কাছ থেকে তার কিছু একটা দরকার। শুধুই গল্প করার জন্য, একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তারা কারও সঙ্গে দেখা করে না। এমনকি মেসেজ দিয়ে খোঁজ নেওয়ারও তারা প্রয়োজন মনে করে না। তাদের ধারণা আপনাকে সবসময়ই তারা পাশে পাবে।

৭.  সবসময় তারাই ভুক্তভোগীঃ

তারা ভুক্তভোগী হওয়ার অভিনয় করে। চিন্তাধারায় অকৃতজ্ঞ মানুষগুলো নিজেদের সবসময়ই ভুক্তভোগী মনে করে। তারাই পৃথিবীতে সবচাইতে কষ্টে আছে। আপনি যদি কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ করেন, তারা অনেকগুলো এমন উদাহরণ তুলে ধরবে যেখানে তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল। আর আপনি যদি সেসময় তাদের সহানুভূতি কিংবা সমাধানের পথ দেখান সেটাও তারা আমলে নেবে না।

যেভাবে অকৃতজ্ঞ মানুষদের সামলাবেনঃ

অকৃতজ্ঞ মানুষ যে কারও জীবনে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। অকৃতজ্ঞতা কখনই নেতিবাচক নয়। আপনি যদি বেশিরভাগ সময় এরকম মানুষের সঙ্গে সময় কাটান তবে জীবন হয়ে উঠতে পারে অতিষ্ট।

তাই তাদের সামাল দেওয়ার কয়েকটি পন্থা এখানে দেওয়া হল।

১.  নিজের অনুভূতি প্রকাশঃ

হয়ত এটা অত সহজ হবে না তবে বন্ধু বা পরিবারের কেউ যদি অকৃতজ্ঞ আচরণ করে তবে অবশ্যই মুখোমুখি বসে নিজের অনুভূতিটা প্রকাশ করতে হবে। বলতে হবে তার কারণে আপনি কতটা খারাপ বোধ করছেন। তবে সমস্যা হচ্ছে অকৃতজ্ঞ মানুষ এসব কথা শুনেও কিছু উপলবদ্ধি করবে না। কিন্তু ওই মানুষটাকে ‘কেয়ার’ করলে সেটা আলাদা বিষয়। এক্ষেত্রে সময়ের অপেক্ষায় থাকা ভালো। বোঝার চেষ্টা করা উচিত হবে কোনো বিশেষ কারণে সে এরকম আচরণ করছে কিনা।

সময় ও সুযোগ বসে তার সঙ্গে কথা বলুন, সৎ ভাবে। সুন্দর ধীর স্থির ভাবে বুঝিয়ে বলুন আপনার কেমন লাগছে তার সেসব আচরণে। অভিযোগ বা দোষ দিয়ে এক্ষেত্রে লাভ হবে না। আপনার কাজের মূল্য দিক, সে যেন আপনাকে কিনে নিয়ে আসছে- এরকম মনে না করে।

ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিন। তবে মনে মনে তৈরি থাকুন সেটা হয়ত তারা নাও করতে পারে।

২.  তাদের দৃষ্টিতে দেখাঃ

এই পরিস্থিতিতে নিজে বোঝার চেষ্টা করুন যে, আপনার কোনো ব্যবহারের কারণে সে এরকম অকৃতজ্ঞ মনোভাব দেখাচ্ছে কিনা। যতই মনে করুন আপনি কিছু করেননি, তারপরও ঠাণ্ডা মাথায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পর্যালোচনা করুন। বন্ধু বা পরিবারের কেউ অকৃতজ্ঞ আচরণের কোনো বিশেষ কারণ আছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করুন।

এমনও হতে পারে এই ব্যবহার সাময়িক। সে হয়ত কোনো কঠিন সময় পার করছে, আর সেটা সামলানোর চেষ্টা করছে। আর এই সময় হয়ত সে আপনাকে পাশে চাইছে কোনো কিছু না করার বিনিময়ে।

তাই বোঝার চেষ্টা করতে হবে, তারা কি এরকমই নাকি বিষয়টা সাময়িক।

৩.  সীমারেখা তৈরি করুনঃ

যে অকৃতজ্ঞ আচরণ করছে তাকে যদি পছন্দ করেন বা ‘কেয়ার’ করেন তবে নিজের ও তার মধ্যে একটা সীমারেখা তৈরি করুন কী রকম ব্যবহার তার সঙ্গে করবেন।

তার জন্য কী করবেন আর কী করবেন না।

যখনই সীমারেখাটা টানতে পারবেন, সেটাতেই শক্তভাবে আটকে থাকুন। এটা হয়ত বেশ কঠিন হবে, আর তারা হয়ত সেই সীমারেখা ভাঙতেও চেষ্টা করবে। তবে তাদের কাছে আপনার ব্যাপারটা পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এই সীমারেখাটা আপনাকে ধরে রাখতেই হবে।

৪.  এক কদম পেছনে যানঃ

যদি আপনার জীবনের কেউ সবসময় অকৃতজ্ঞ আচরণ করেই যায়, আর উপরের পদক্ষেপগুলো নেওয়ার পরও কোনো সমাধান না আসে তবে আপনাকে ওই মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের পুর্নমূল্যায়ন করতে হবে।

এমন হতে পারে, আপনি তার সঙ্গে আর একক সময় কাটাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিংবা সেটা হতে পারে তার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখবে না।

তার জীবনে আপনি বা আপনার জীবনে সে কতটা ভূমিকা রাখবে সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। অকৃতজ্ঞ মানুষকে সামাল দেওয়া সহজ বিষয় নয়। তবে তাদের আচরণ যদি আপনার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সেক্ষেত্রে তাদের এড়িয়ে চলাই হবে আপনার জন্য মঙ্গল।

নিজের প্রতি সৎ থাকুন, অন্যদের সঙ্গেও সদাচরণ করুন। দেখবেন জীবন অনেক সুন্দর হচ্ছে।

 

Leave a Reply