পথে-ঘাটে ভিখারী দেখলে অনেকেই নিজের পকেট হাতিয়ে খুচরা যে এক-দুই অথবা পাঁচ টাকা (অথবা পয়সা) পান, সব ভিখারীর হাতে তুলে দিয়ে সন্তুষ্ট হন। নিঃসন্দেহে এটা মহৎ কাজ। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে- শক্ত-সবল ভিখারীকে টাকা-পয়সা দিলে প্রকারান্তরে ভিক্ষাবৃত্তিকেই উৎসাহিত করা হয়!
গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখুন- এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ আয়-রোজগারের উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত ছুটে বেড়াচ্ছেন। সবারই লক্ষ্য টাকা আয় করা- কেউ পণ্য, কেউ-বা সেবা অথবা অন্যকিছু অন্য কোনোভাবে বেচে শেষমেশ (পরোক্ষভাবে) টাকাই আয় করছেন। কেবলমাত্র ভিখারীরা সরাসরি (প্রত্যক্ষভাবে) টাকা আয় করে, কিন্তু তারপরও তারা সারাজীবন ভিখারীই রয়ে যায়; কখনো ধনী বা দাতা হতে পারে না! সুতরাং ভিখারীকে টাকা-পয়সা দিয়ে আপনি দান-এর সওয়াব পেলেও সমাজের সার্বিক কল্যাণে আপনার ওই দান কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না!
এমন বাস্তবতায় সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে একটি প্রস্তাব পেশ করতে চাই-
অনুগ্রহ করে সবাই একটি করে মাটির ব্যাংক (অথবা কৌটা) সংগ্রহপূর্বক নিজ বাসায় সংরক্ষণ করুন। প্রতিদিন নানাভাবে আপনার পকেটে যে খুচরো টাকা-পয়সা (এক টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা পর্যন্ত) জমবে, দিন শেষে বাসায় ফিরে সেই খুচরো টাকা-পয়সাগুলো দান তথা অন্যকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে ওই মাটির ব্যাংকে বা কৌটায় সঞ্চয় করতে থাকুন।
খোদা না করুন তো, আপনার চেনা-জানা (এমনকি অচেনাও হতে পারে) কেউ যদি হঠাৎ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন অথবা মৃত্যুবরণ করেন, তখন সামাজিক গণমাধ্যমে দেখে অথবা অন্য কোনোভাবে অবগত হওয়া মাত্র সবাই যার যার মাটির ব্যাংক ভেঙে যে কয় টাকা-পয়সা পাবেন (কম-বেশি যা-ই হোক), সব আহত/নিহত ব্যক্তির বা তার নিকটাত্মীয়ের নম্বরে বিকাশ করে দেবেন (সঠিক নম্বর যোগাড়ে আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারি; সেজন্যও সওয়াব-এর অধিকারী হবেন)। তারপর আরেকটি নতুন মাটির ব্যাংক যোগাড় করে একই নিয়মে আবার খুচরো টাকা-পয়সা জমাতে শুরু করে দিন…।
আপনার মানিব্যাগের কোনায় পড়ে থাকা খুচরো টাকা-পয়সাগুলো এমনিতে কোনো কাজে লাগে না (অনেক সময় উটকো ঝামেলা করে), কিন্তু এভাবে সঞ্চয় করলে দেখবেন- অল্প ক’দিনেই অনেক টাকা জমে যাবে, যেটা আপনি জমানো শুরু না করা পর্যন্ত কল্পনাও করতে পারবেন না! এমনকি বন্ধু-বান্ধবদেরকেও তাঁদের পকেটের কোনায় পড়ে থাকা খুচরো টাকা-পয়সা (সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা পর্যন্ত) দান-এর উদ্দেশ্যে আপনার মাটির ব্যাংকে জমা দিতে উৎসাহিত করতে পারেন। যেহেতু দান-এর পরিমাণটা যৎসামান্য (সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা), কেউই আপত্তি করবেন বলে মনে হয় না, বরং খুচরার বোঝা কমিয়ে সবাই ঝামেলামুক্ত হতে চাইবেন!
অনেকে হয়ত ভাবছেন- এভাবে কয় টাকাই-বা জমবে? কিন্তু এই নিয়মে চললে সবার সন্মিলিত সঞ্চয়ের পরিমাণ দেখে নিজেরাই বিস্মিত হয়ে যাবেন! একদিকে আর্থিক সহায়তা পেয়ে হঠাৎ আহত/নিহত ব্যক্তির বা পরিবারের মহাবিপদের মুহূর্তে তাৎক্ষণিক উপকার হবে, অন্যদিকে যাঁরা এই সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন, তাঁদের ব্যক্তিগত আয়-রোজগারে বিশেষ বরকত চলে আসবে ইনশাল্লাহ্।
দান, খয়রাত যে কেবলমাত্র অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকেই করতে হবে- এমন কিন্তু নয়, আমরা চাইলে আমাদের যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সাময়িক/ক্ষণিকের অসহায় সহকর্মী/বন্ধু/নিকটাত্মীয়ের পাশেও দাঁড়াতে পারি। এতে করে দাতা যেমন দান-এর সওয়াব (রহমত ও বরকত) পাবেন, তেমনি গ্রহীতা তাঁর দুঃসময়ে বিশেষভাবে উপকৃত (বিপদমুক্ত) হবেন।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখার জন্য সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। শুভ হোক সকল মঙ্গল প্রয়াস।
পুনশ্চ : দুঃসময়ে দান গ্রহণ করলে কারো ইজ্জত চলে যায় না বা কেউ স্থায়ীভাবে দরিদ্র হয়ে যায় না! পবিত্র কোরআন-এর দান, খয়রাত ও সাদকা সংক্রান্ত আয়াতসমূহ হচ্ছে- ২:১৭৭, ২৬১-২৬৮, ২৭০-৪২৭; ৩:১৩৪; ৪:৩৮; ৯:৫৮-৬০, ৭৯-৮০, ১০২-১০৪; ১৭:২৮-২৯; ৩০:৩৯; ৩৬:৪৭; ৫৭:১৮; ৫৮:১২-১৩; ৯২:৫-৭, ১৭-২১; ১০৭:১-৭।
আসুন, আমরা সবাই দাতা হই এবং আপাতত যাঁকে দান করছি, মহান আল্লাহ্’র কাছে দোয়া করি- তিনিও যেন অদূর ভবিষ্যতে দাতা হতে পারেন! কেউ অসুস্থ হলে সুস্থতার জন্য দাওয়া (ওষুধপত্র), দোয়া ও দান সমান কার্যকর।