ভালো ছাত্র হওয়ার ৭ টি গুনাবলী আলোচনা করা হলোঃ

১.  নিয়মিত পড়াশুনা করেঃ

ভালো ছাত্র নিয়ে তুমি যদি গবেষণা কর তাহলে তাদের মাঝে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট খুজে পাবে সেটা হলো তারা খুবই নিয়মিত।
আমাদের যদি বলা হয়, ১২০ পৃষ্টার ১ টা বই  ৩ দিনে পড়ে শেষ করতে হবে। তাহলে আমরা প্রথম দিন ভাবি , আরো তো ২দিন আছে! আজ না হয় বিশ্রাম করা যাক! পরের দিন ভাবি,আরো তো একদিন আছে। এবং শেষ দিন ভাবি,বিকালে করা যাবে। যখনই বিকাল আসে তখন বলি, হায় হায়!আর মাত্র ২ঘন্টা বাকি আছে।এখন কী করা যায়? তখনই শর্টকার্ট খোজা-খুজি শুরু করে দেই। অথচ তুমি যদি প্রতিদিন তোমার পড়াশুনার  ফাকে ৪০ পৃষ্টা করে  পড়তে তাহলে তোমার কাছে ব্যাপারটা খুবই সহজ হতো।
সাধারণত আমরা মনে করি,ভালো ছাত্ররা বোধ হয় খুব পড়াশোনা করে। আসলে আমাদের ধারনা ভুল! তারা যদি প্রতিদিন রাতে ২ঘন্টা করে পড়াশোনা করে তাহলে বছরে (৩৬৫*২=৭৩০)ঘন্টা পড়াশোনা করে। যা আমরা মোটেও করি না আমরা যখন মটিভেট হই তখন ২ঘন্টার পরিবর্তে ৫ঘন্টা পড়ি। পরের ৬দিন টেবিল থেকে ১০০ হাত দূরে থাকি। এভাবেই আমাদের বছর শেষ হয়।
টিপসঃ পড়াশোনা কম করলেও চলবে। তবে অবশ্যই নিয়মিত পড়াশোনা ও স্কুলে যেতে হবে নোট করতে হবে।

২.  মনোযোগী হয়ঃ

মনোযোগী হওয়া যতটা কঠিন আমরা ভাবি,ততটা কঠিন নয়। মেধাবী শিক্ষার্থীরা খুবই মনোযোগী হয়। তারা ক্লাসে খুব মনোযোগ সহকারে শিক্ষকের লেকচার শোনে। আমি ছাত্র জীবনে এমনও অনেক শিক্ষক পেয়েছি যারা বলে,তোমার কিছু করা লাগবে না শুধু আমার কথা গুলো মনোযোগ সহকারে শুনবে। একজন শিক্ষক বছরে একই লেকচার বার বার রিপিট করে। অন্যদিকে কঠিন বিষয়কে সহজ করে দেয়।
স্যার যদি ক্লাসে গল্প করে তবেও মনোযোগ সহকারে শুনবে। মূলকথা হলো,শিক্ষকের ব্যাপারে সন্দেহ করা যাবে না। এক শিক্ষকের সাথে অন্য শিক্ষকের তুলনা করা যাবে না। অন্যদিকে অনেকক্ষন শিক্ষকের দিকে চেয়ে থাকলে গাড় ব্যাথা করে যা মনযোগ নষ্ট করে। এ সমস্যা প্রায় শিক্ষার্থীর! এর থেকে পরিত্রাণ পেতে তোমাকে একটু ট্রিক খাটাতে হবে। অনেকক্ষণ চেয়ে না থেকে প্রতি ২ মিনিট পর পর অন্যদিকে চাইতে পারো। আবার একাধারে অনেকক্ষন বসে থাকলে শরীর কেমন জানি করে। এক্ষেত্রে তুমি ক্লাস ব্রেক এর সময় একটু হাটাহাটি করতে পারো। মূলকথা হলো,তোমাকে খুজে বের করতে হবে যে কি কারনে তোমার মনোযোগ নষ্ট হয় এবং তা ট্রিক খাটিয়ে সমাধান করতে হবে।

৩.  সামনের আসনে বসেঃ

ছাত্র জীবনে সামনের আসনে বসার জন্য কত যে মারামারি করেছি তা বলে শেষ করতে পারবো না। তাই বলে সামনের আসনে বসার জন্য মারামারি করা যাবে না।তুমি চাইলেই সবার আগে গিয়ে সামনের আসন নিতে পারো। মজার বিষয় হলো, সবাই সামনের আসনে বসতে চায় না।সামনের আসনে বসতে প্রায় ছাত্রই ভয় পায়। এই সুযোগ তুমি চাইলেই নিতে পারো।
সাধারনত সামনের আসনে ভালো শিক্ষার্থীরা বসে।তুমি যদি সামনের আসনে বসো তাহলে তাদের চিন্তা_-চেতনা তোমার মাঝে চলে আসবে।
পাশাপাশি তুমি যদি কোথাও না বুঝো তাহলে তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছো। পেছনের আসনের বসলে তুমি সেই সুযোগ পাচ্ছো না।
সামনে থেকে স্যারের কথা ক্লিয়ার শুনতে পাবে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো ,পেছনের আসনে দূবল ছাত্রদের সজ্ঞে বসে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারবে না। তুমি চাইলেও পারবে না।
টিপসঃ সবার আগে গিয়ে সামনের আসন নিতে পারো এবং বাকি সময়ে গনিত বইয়ের অংক কষতে পারো।

৪.  বন্ধুত্ব করে সাবধানে ভালো ছাত্র/ ছাত্রীর সাথেঃ

কথাটি তেতো হলেও সত্য যে, তোমাকে বন্ধুত্ব করতে হবে এমন কারো সাথে যাকে তুমি অনুসরন করো। যার মতো তুমিও হতে চাও! যেহেতু তুমি ভালো ছাত্র হতে চাচ্ছো তাই তোমাকে ভালো মেধাবী ছাত্রকে অনুসরন করতে হবে। তাদের সাথে তুমি চলাচল করলে তুমি অজান্তেই অনেক কিছু শিখে ফেলবে। শুধু তাই নয়,তোমার মাঝেও তার আচরন,চলাচল,চিন্তাধারার ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ছোট সময় যখন তুমি কোনো দুষ্ট ছেলের সাথে চলাচল করতে তখন বড়রা নিষেধ করতো তাদের সাথে মিশতে।যদিও তখন তুমি ভাবতে , সে খারাপ তাতে আমার কি?আমি শুধু তার সাথে কেবল চলাচছাও। এখন বয়সে বড় হয়েও এরকম প্রশ্ন করলে কিন্তু চলবে না!
টিপসঃ এমন কারো সাথে বন্ধুত্ব করবে যে সবার কাছে প্রশংসনীয়।যার মতো তুমি হতে চাও।

৫.  সহজ হিসেবে গ্রহন করেঃ

কোনো কিছু করতে গেলেই ব্রেন সিগন্যাল দেয়,কাজটা খুব কঠিন! এক সময় আমার আম্মা বলেছিলো, যা বাজার থেকে বাজার করে নিয়ে আয় আমি ভেবেছিলাম,বাজারে যাবো ,কতো কষ্ট করে বাজার করতে হবে! খুব কঠিন কাজ এক সময় আমি উপলব্দি করলাম আমি আমার ব্রেনে যা দিচ্ছি তার আউটপুট আসছ, খুব কঠিন। পরে নিজেকে ঠিক করে নিলাম  এরকম সমস্যা শুধু আমার মধ্যে আছে এমন নয়।
অনেকের মধ্যেই আছে। যা উপলব্দি করতে করতে অনেক সময় নষ্ঠ হয়ে যায়।
অন্যদিকে ইংরেজি বই হাতে নিলে মনে হয়, ইংরেজি অনেক কঠিন ! তখন ইংরেজি রেখে দিয়ে গনিত হাতে নেই । কিন্তু ফলাফল তো একই! এসব সমস্যা প্রতিদিনই ফেস করতে হয়। ছোট সমস্যা কিন্তু ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অতি জরুরী এ সমস্যা সমাধান করা উচিৎ। এর ভালো একটি সমাধান হলো , সবকিছুকে কঠিন না ভেবে সহজ ভাবা।
টিপসঃ সবকিছুকে কঠিন না ভেবে সহজ ভাবতে হবে এবং বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে দিতে হবে।

৬.  কৌশলী হয়ঃ

বর্তমান পরিস্থিতে একটু কৌশলী না হলে চলে না। সে যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন। যেহেতু তুমি ভালো ছাত্র হতে চাচ্ছো সেহেতু তুমি ভালো ছাত্র না। ভালো ছাত্রদের হাতের লেখা সুন্দর থাকে অন্যদিকে আমাদের হাতের লেখা আমরা নিজেরাই বুঝি না এটাই স্বাভাবিক।
সকালে যা পড়লে পরীক্ষার হল এ তাই চলে আসলো মানে কমন পড়লো। হুবুহু লেখার পড়েও ফলাফল সে একই ! এর কিছু কারন রয়েছে।
প্রায় সময়ই দেখা যায়,এসএসসি পরীক্ষার খাতা দেখে নবম-দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা! এ ক্ষেত্রে তোমার রেজাল্ট কেমন হবে তা নির্ভর করে তোমার হাতের লেখা এবং তুমি কত পৃষ্ঠা করে লিখেছ! এ পরিস্থিতিতে তোমার খাতা সঠিক মূল্যয়ন হবে না তা তুমি শিউর থাকো।
এই সমস্যা এড়াতে তুমি করতে পারো? হ্যা, তুমি তোমার খাতা সঠিক মূল্যয়ন করতে বাধ্য করতে পারো। কীভাবে?
 ১ পরীক্ষার প্রশ্ন পড়ে যেটা তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি কমন পড়েছে সেটা লিখতে হবে।
 ২ তোমার খাতা নজরে আনতে তোমাকে রঙ পেন্সিল (নীল,সবুজ) ব্যাবহার করতে হবে।
৩ অবশ্যই প্যারাগ্রাফ আকারে প্রশ্ন লিখতে হবে।মানে (খ) যদি লিখো তাহলে ২টি অংশ,(গ) যদি লিখো তাহলে ৩টি অংশ এবং (ঘ) যদি লিখো তাহলে ৪টি অংশ লিখতে হবে।
৪ যতটা পারো হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করো।হাতের লেখা ভালো করতে গিয়ে আবার ৭টার কম লেখা যাবে না।

৭.  ধর্মীয় ক্ষেত্রে আরো সক্রিয় হয়ঃ

স্বাভাবিক ভাবেই তোমার মন এ প্রশ্ন আসতে পারে, এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে কেন আমি সবচেয়ে নিচে রাখলাম। এর যথেষ্ট কারন রয়েছে।উপরের যতগুলা টিপস রয়েছে তা এই ধর্মীয় ক্ষেত্রে সক্রিয় হলে অন্য কিছু লাগবে না। শুধুমাত্র এই একটি মাত্র বিষয় মেনে চললে আর কিছু লাগবে না। প্রথমেই যদি এই টিপসটি দিতাম তাহলে উপরের টিপস গুলা বলা লাগতো না। তা সবার শেষে এই টিপসটি দিলাম। যার যার ধর্ম অনুযায়ী যেমনঃ নামাজ তোমাকে নিয়মিত করবে।জামায়াতের সজ্ঞে নামাজ পড়লে সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন করবে। এ রকম উদারহন দিলে পোষ্ট শেষ করতে পারবো না।
টিপসঃ ধর্মীয় ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে যার যার ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী

উপসংহারঃ 

উপরের লেখা গুলো পড়েছ মানে এই নয় যে তুমি ভালো ছাত্র হয়ে যাবে।এটা তোমার উপর নির্ভর করে।তুমি যতটা কাজে-কর্মে দেখাতে পারবে ততটা সফল হবে। আমি নিজে লিখেছি মানে এই নয় যে,আমি ভালো ছাত্র! আমি দূর্বল ছাত্র এটা আমার অপরাধ নয়  তবে ভালো ছাত্র হওয়ার চেষ্টা  না করা এটাই আমার  অপরাধ । ভালো ছাত্র নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণার ফল মাত্র আজকের লেখা আমি আশা করি আপনি ৭ টি নিয়ম মেনে মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করলে আপনি অবশ্যই সফল হবেন ইনশাআল্লাহ ।