মা-বাবার খেদমতের গুরুত্ব ( ৩য় পর্ব )

শিক্ষনীয় ঘটনাঃ

শিক্ষণীয় উপদেশমূলক চমৎকার একটি ঘটনা। এক বৃদ্ধ ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছিলেন। বৃদ্ধ একদিন ঘরের বারান্দায় বসে ছিলেন। ইতোমধ্যে একটি কাক উড়ে এসে ঘরের দেয়ালে বসলো। বৃদ্ধ নিজের ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা, এটা কী? ছেলে বলল, আব্বা, এটা একটি কাক। খানিক পর বৃদ্ধ আবার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা, এটা কী? ছেলে এবারও উত্তর দিল, আব্বা, এটা একটা কাক। আরো কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধ-পিতা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা, এটা কী? ছেলে এবার চটে গেল। তার স্বরে পরিবর্তন দেখা দিল। সে ধমকের স্বরে উত্তর দিল, কাক, কাক। বৃদ্ধ এবার একটু সময় নিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করে বসলেন, বাবা, এটা কী? এবার ছেলের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। সে ধমকের সুরে বলল, একটা কথা বারবার জিজ্ঞেস করছেন কেন! হাজার বার বলছি, এটা একটা কাক! এতবার বলার পরেও আপনার বুঝে আসে না? এভাবে ছেলে বৃদ্ধ-পিতাকে শাসাতে লাগল।

একটু পর বৃদ্ধ সেখান থেকে উঠে গেলেন। ঘরে গিয়ে একটি পুরাতন ডাইরি বের করলেন। ডাইরির একটি পাতা খুলে ছেলের কাছে আসলেন এবং বললেন, বাবা, এই পাতাটি একটু পড়ো। দেখো তো আমি কী লিখেছি।

ছেলে পড়তে লাগলো, লেখা আছে যে, বাবা লিখেছেন, ‘আজ বারান্দায় বসা ছিলাম। সঙ্গে ছিল আমার ছোট ছেলে। ইত্যবসরে একটি কাক আসলো। ছেলে আমাকে পঁয়ত্রিশ বার জিজ্ঞেস করল, আব্বাজান এটা কী? আমি পঁয়ত্রিশ বারই গুরুত্বসহ উত্তর দিয়েছি, বাবা, এটা একটা কাক। ছেলেটা যতবারই প্রশ্ন করেছে, ততবারই আমার কাছে ভালো লেগেছে।’

ছেলে লেখাটা পড়া শেষ করলে বাবা বললেন, বৎস! পিতা আর সন্তানের মধ্যে পার্থক্য এখানেই। তুমি যখন ছোট ছিলে তখন পঁয়ত্রিশ বার আমাকে একই প্রশ্ন করেছিলে। আর আমিও আনন্দচিত্তে শান্তভাবে উত্তর দিয়েছিলাম। অথচ আজ আমি মাত্র পাঁচ বার জিজ্ঞেস করলাম। আর এতে তুমি রেগে গেলে।

উপদেশ মূলক কাহিনীঃ

এক লোক মৃত্যুশয্যায় শায়িত। তখন উপস্থিত লোকজন বার বার চেষ্টা করছিলেন তার মুখ থেকে কালেমা বের করার। সবাই বে-কারার। অথচ তার মুখ থেকে কালিমা বের হচ্ছে না। তাই তারা নিরুপায় হয়ে এক বুজুর্গের কাছে গিয়ে বৃত্তান্ত খুলে বললেন। বুজুর্গ পরামর্শ দিলেন, তার মাতা-পিতাকে জীবিত থাকলে লোকটিকে তাৎদের কাছে নিয়ে যাও এবং তাঁদের মাধ্যমে মুক্তির দোয়া করাও। মনে হয় সে নিজের মাতা-পিতার নাফরমানী করেছে যার ফলে তার ওপর এর শাস্তি নেমে এসেছে। তাদের পক্ষ থেকে মাফ না হওয়া পর্যন্ত মনে হয় এর মুখে কালিমা আসবে না।
বোঝা গেল, মাতা-পিতার নাফরমান্‌ তাদের হৃদয়ে আঘাত দেওয়া জঘন্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নবীজী  শিক্ষার প্রতিটি ছত্রে ছত্রে এ ব্যাপারে কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন। কোনো সাহাবী তাঁর কাছে পরামর্শের জন্য আসলে তিনি মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিতেন।

ইলম শিক্ষার জন্য মাতাপিতার অনুমতিঃ

আমাদের এখানে (দারুল উলুম) অনেক ছাত্র ভর্তি হতে আসত। ইলমের প্রতি যাদের স্পৃহা থাকত। কিন্তু যখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, মা-বাবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছ কি? তখন জানা যায়, তারা অনুমতি ছাড়াই এসেছে। তারা ওজর পেশ করে বলে, কী করবো; বাবা-মা’র অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না! আমি তাদেরকে বলি, মৌলভী হওয়া কোনো ফরয-ওয়াজিব নয়। মা-বাবাকে মেনে চলা ওয়াজিব। ইলম তোমার জন্য কেবল ততটুকুই ফরয যতটুকু না হলে ইসলামের উপর চলা যাবে না। যেমন নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন জানা তোমার জন্য ফরজ। এতোটুকুই ইলম অর্জনে যদি তোমার মাতা-পিতা বাধা দেন তাহলে তখন তাদের কথা না মানলেও চলবে। কিন্তু মৌলভী হওয়া ফরজ নয়। সুতরাং মা-বাবার অনুমতি ছাড়া তোমার মৌলভী হওয়ার খায়েশ পুরা করা জরুরি নয়। আমার হযরতের ভাষ্যমতে, তখন তাহলে খায়েশ পূর্ণ করা হবে। তখন তো দীনের কাজ হবে না। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

জান্নাত লাভের সহজ পথঃ

মনে রাখবেন, যতদিন মাতা-পিতা জীবিত থাকবেন ততদিন তাঁরা আপনার জন্য মহান নেয়ামত। যার তুলনা দুনিয়াতে আর নেই। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে, নবীজি  বলেছেন, যদি মহব্বতের সাথে একবার মাতা-পিতার প্রতি তাকাও তাহলে একটি হজ এবং একটি উমরাহর সাওয়াব পাবে।

এজন্য অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, দুর্ভাগা ঐ ব্যক্তি যে নিজের মাতা-পিতাকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে ব্যর্থ হয়েছে।

কারণ সন্তান ইচ্ছা করলে তাদের খেদমত করে সহজে জান্নাতে যেতে পারে। তাঁদের সামান্য খেদমত তোমার আখেরাতকে করে তুলবে নূরান্বিত। তাই মাতা-পিতা জীবিত থাকলে এ নেয়ামতের মূল্যায়ন করো। তাঁরা যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবেন তখন বুঝে আসবে তাঁদের কদর। তখন ‘হায় আফসোস’ করলে কোনো কাজ হবে না। তাঁরা জীবিত থাকাকালে জান্নাত ছিল তোমার জন্য খুবই সহজ। তাঁদের মৃত্যুর পর যা হয়ে পড়বে খুবই কঠিন। তখন শত আফসোস বৃথা যাবে। তাই সময় থাকতে তাঁদের কদর করো।

আল্লাহ আমাদেরকে  মা- বাবার সেবা করার তৈফিক দান করুন আমীন।

মা-বাবার খেদমতের গুরুত্ব ( ৪র্থ পর্ব ) পড়ার জন্য চোখ রাখুন।

 

 

Leave a Reply