কোরআন – হাদিসের আলোকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ৪টি উপায়।

আজ আলোচনা করব কোরআন হাদিসের আলোকে কি ভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন ?

১.রাগ  কী ?

২.রাগ আমাদের জীবনের সকল অশান্তির কারন কেনো ?

৩. কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন?

১.রাগ  কী ?

রাগ মানবিক আবেগের অংশবিশেষ। তবে অনিয়ন্ত্রিত রাগ মারাত্মক ক্ষতিকারক। জ্ঞানীরা বলেন, রাগ হলো বারুদের গুদামের মতো। আগুনের স্ফূলিঙ্গের ছোয়ায় সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে এই রাগ। কথায় আছে রেগেছেন তো হেরেছেন ।

২.রাগ আমাদের জীবনের সকল অশান্তির কারন কেনো ?

ইসলাম মানুষকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম মনে করে, রাগ মানুষকে জ্ঞান, বিবেক ও ধর্মের পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়। রাগের কারণে মানুষের আচার-আচরণ ও চিন্তায়া খারাপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই রাগান্বিত অবস্থায় ক্ষমা করার উপর গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। বিশেষ করে কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকার পরও প্রতিশোধ না নেয় এবং ক্ষমা করে দেয়, তাহলে তার একাজ টি ইসলামের দৃষ্টিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

৩. কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন?

রাসূলুল্লাহ (সা. )বললেন, রাগ বর্জন করো। সাহাবি কয়েকবার বললেন, আরও নসিহত করুন। প্রত্যেক বারই রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, রাগ বর্জন করো। -বোখারি শরীফ

রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরআন – হাদিসের আলোকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ৪ টি উপায় বলে দিয়েছেন,

যা এখন আলোচনা করা হলো-

১. নং উপায় আউযুবিল্লাহিমিনাশশাইত্বনিররাজীম পাঠ করা।

একবার রাসূলুল্লাহ(সা.) এর সামনে দুই সাহাবী তর্কে লিপ্ত হল তর্কের এক পর্যায়ে এতটাই উত্তেজিত হলেন একজন আরেক জনকে মারতে গেলে মারামারি লাগার উপক্রম রাসূলুল্লাহ(সা.) দেখলেন সাহাবীর চেহারা আগুনের গোলার মত রেগে লাল হয়ে গেছে।

তখন রাসূলুল্লাহ(সা.) তাকে বললেন ইন্নি লাআলামুকালিমাতান আমি এমন একাট বাক্য জানি

এই রাগান্বিত সাহাবা যদি এই বাক্যটা পড়া শুরু করে  দেয় তার রাগ টা কে নিমেসেই আল্লাহ ঠান্ডা করে দিবেন ।

অতি আগ্রহের সাথে সাহাবা বললেন কি সেই বাক্য ? বিশ্বনবী ( সা) বললেন পড় আমার সাথে

আউযুবিল্লাহিমিনাশশাইত্বনিররাজীম। বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই ।

রাগ কমানোর দোয়া সহীহ হাদিস ।

২নং টিপস – বিশ্বনবী বললেন এজাগদিবা আহাদুকুম ফালইয়াছকুদ।

কথা বন্ধ করে চুপ থাকা ।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের যখন প্রচন্ড পরিমাণ রাগচলে আসবে তখন তোমরা কথা বন্ধ করে একদম চুপ থাকবে, অনেকেই দেখবেন যখন প্রচন্ড রেগে যায় তখন বিড় বিড় করে কি যেন বলতে থাকে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে মানুষ মারামারি করে, হাতের সামনে যা কিছু পায় তা  ছুঁড়তে থাকে অর্থাৎ সে তার রাগকে কন্ট্রোল করতে পারেনা তখন তাকে চুপ থাকতে হবে।

( আচ্ছুকুদ এজাগদিবা আহাদুকুম ফালইয়াছকুদ ) কিপ সাইলেন্ট, কিপ কোয়াইট, রিলাক্স, কুল

অনেকেই রাগের সময় অস্রাব্য ভাষায় গালি গালাজ করতে থাকেন ভাঙচুর করতে থাকে তখন কথা বন্ধ করে চুপ থাকতে হবে।

৩নং টিপস –রাসূলুল্লাহ (সা.) কার্যক্রম কমিয়ে দিতে বলেছেন ।

“এযাগদিবা আহাদুকুম ওহুয়া কয়েমফালইয়াজলিজ”,

দাড়ানো অবস্থায় কেউ যদি রেগে যায় সে যেনো সাথে সাথে বসে পড়ে,

( ফাইন যাহাবা আনহুল গাদাবু ও ইল্লা ফালইয়াযতাজে )

বসা অবস্থায় কেউ যদি রেগে যায় সে যেনো সাথে সাথে শুয়ে পড়ে

চুপ করে ২ চোখ বন্ধ করে থাকুন ও ঘুমানোর চেস্টা করুন দেখবেন রাগ চলে যাবে ইনশাআল্লাহ।

৪নং টিপস – রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন এরপরেও যদি রাগ না কমে তাহলে অযু করবেন।

( ইন্নাল গদাবা মিনাষশাইতান ) নিশ্চয় রাগ আসে শয়তান থেকে,

( অ ইন্নাসশাইতানা খুলেকামেনারনার ) শয়তান তৈরী আগুন থেকে

( অইন্নাননারা তুৎ ফাওবেলমা ) আগুন নিবানো হয় পানি দিয়ে ।

( ফাইযা গজিবা আহাদুকুম ফালইয়াতাওদ্দা ) তাই কারো যখন রাগ বেড়ে যায়

সে যেনো ঠান্ডা পানি দিয়ে অযু করে নেয় সাথে সাথে তার রাগ কমে যাবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) কি চমৎকার দার্শনিক কথার কি সিকুয়েন্স

রাগের সময় কেনো অযু করবেন কোরআন হাদিসের আলোকে কি অসাধারন ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিচের আরবির অর্থ গুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

( আলগদাবু মিনাষশাইতান ) রাগ আসে শয়তান থেকে

( অইন্নাসশাইতানা খুলেকামেনারনার ) শয়তান তৈরী আগুন থেকে

( অইন্নাননারা তুৎ ফাওবেলমা) আগুন নিবানো হয় পানি দিয়ে ।

( ফাইযাগজিবা আহাদুকুম ফালইয়াতাওদ্দা) তাই কারো যখন রাগ বেড়ে যায়

সে যেনো ঠান্ডা পানি দিয়ে অযু করে নেয় সাথে সাথে তার রাগ কমে যাবে।

আজকের আলোচনা থেকে আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করলাম তা আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে আমরা যেন নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

সংসার জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য রাষ্ট্রী ও জীবন, ধর্মীয় জীবন, সব জায়গাতে যেন সুখ শান্তিতে থাকতে পারি।

কোরআন হাদিসের আলোকে রাসূলুল্লাহ(সা.) যে (০৪) চারটি উপায় বলে দিয়েছেন তা যদি আমরা মেনে চলি প্রত্যেকে আমরা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারব ইনশাল্লাহ।

Leave a Reply